Chinese freighter: তাইওয়ানের বন্দরে সন্দেহজনক আচরণে আটক চিনা জাহাজ

তাইওয়ানের প্রধান দ্বীপ এবং পেঙ্ঘু কাউন্টির মধ্যে সমুদ্রতলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেবল কাটার সন্দেহে একটি চিনা মালবাহী জাহাজকে (Chinese freighter) আটক করা হয়েছে। এই জাহাজটি গত…

Chinese Freighter Suspected of Cutting Taiwan’s Undersea Cable Used Ports for 3 Months

তাইওয়ানের প্রধান দ্বীপ এবং পেঙ্ঘু কাউন্টির মধ্যে সমুদ্রতলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেবল কাটার সন্দেহে একটি চিনা মালবাহী জাহাজকে (Chinese freighter) আটক করা হয়েছে। এই জাহাজটি গত তিন মাস ধরে তাইওয়ানের বন্দরগুলোতে বিভিন্ন নামে প্রবেশ করছিল। ‘তাইপেই টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তোগোর পতাকাবাহী এই জাহাজ, ‘হং তাই ৫৮’, চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হয়। গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তাইওয়ানের কোস্ট গার্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিজিএ) জাহাজটি এবং এর চিনা ক্রুদের আটক করে, যখন তাইপেই-পেঙ্ঘু নং ৩ সমুদ্রতলের ফাইবার অপটিক কেবল কাটা পড়ে।

সিজিএ জানিয়েছে, তারা যখন জাহাজটিকে সম্ভাব্য নাশকতার অভিযোগে আটক করার চেষ্টা করে, তখন ক্রুরা জাহাজের নাম ‘হং তাই ১৬৮’ বলে দাবি করে। কিন্তু অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) এটিকে ‘হং তাই ৫৮’ হিসেবে দেখায়। সিজিএ আরও বলেছে, জাহাজটির প্রকৃত নাম তদন্তের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। ‘লিবার্টি টাইমস’ (তাইপেই টাইমস-এর বোন পত্রিকা)-এর এআইএস রেকর্ড পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে ‘হং তাই’ জাহাজটি তাইওয়ানের কাওশিউং, আনপিং, কিলুং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান বন্দরে প্রবেশ করেছিল। এরপর কোনো এক সময়ে জাহাজটি এআইএস সিগন্যাল বন্ধ করে দেয়।

kolkata24x7-sports-News

   

‘তাইপেই টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারিতে জাহাজটি আবার এআইএস চালু করে এবং কাওশিউং বন্দরের কাছে সনাক্ত হয়। এই সিগন্যাল গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা পর্যন্ত চালু ছিল, যতক্ষণ না সিজিএ জাহাজটিকে আনপিং বন্দরে নিয়ে আসে। রেকর্ডে দেখা গেছে, ‘হং তাই’-এর দুটি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) শনাক্তকরণ নম্বর রয়েছে, যা সংস্থার নিয়মের লঙ্ঘন। এছাড়া, জাহাজটির মেরিটাইম মোবাইল সার্ভিস আইডেন্টিটিস (এমএমএসআই) শনাক্তকরণ নম্বর তানজানিয়ার পতাকাবাহী ‘হং দা ৮’ এবং চীনের পতাকাবাহী ‘জিন লং ৩৮৯’ জাহাজে ব্যবহৃত হয়েছে।

জাহাজের পরিচয় ও মালিকানা
এআইএস রেকর্ডে ধারণা করা হচ্ছে, ‘হং তাই ৫৮’, ‘হং দা ৮’ এবং ‘জিন লং ৩৮৯’ একই জাহাজ। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না কসকো শিপিং কর্পোরেশন এবং গুয়াংডং-ভিত্তিক জিন লং মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট এই ‘জিন লং ৩৮৯’-এর মালিক এবং পরিচালক। ‘জিন লং ৩৮৯’-এর ট্রান্সপন্ডার বছরের পর বছর ধরে নিষ্ক্রিয় রয়েছে, যেখানে ‘হং দা ৮’ তিনটি এমএমএসআই নম্বর ব্যবহার করে সক্রিয় রয়েছে। রেকর্ডে দেখা গেছে, ‘হং তাই ৫৮’-এর এমএমএসআই নম্বর ছয়টি জাহাজের সঙ্গে যুক্ত। গত তিন মাসে এই পাঁচটি জাহাজ তাইওয়ান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে চলাচল করেছে, তবে তাদের এআইএস সিগন্যাল মাঝে মাঝে বন্ধ ছিল। ‘হং দা ৮’ গত ২ ফেব্রুয়ারি আনপিং বন্দরে প্রবেশ করেছিল।

তাইওয়ানের নিরাপত্তার ওপর প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় সিজিএ-এর দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রশংসা করা উচিত। তবে, প্রতিটি কেবল কাটার ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তা এবং সরকারি অর্থনীতির জন্য একটি বড় আঘাত। তাইওয়ানকে সমুদ্রতলের কেবল নাশকতা রোধে একটি কৌশল তৈরি করতে হবে। ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) বিধায়ক পুমা শেন বলেন, সরকারকে সন্দেহজনক কার্যকলাপে জড়িত জাহাজগুলোর ওপর নজর রাখতে হবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে সামুদ্রিক বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি জানান, ভাগ করা গোয়েন্দা তথ্য সরকারকে সন্দেহভাজন জাহাজগুলোর নাম প্রকাশ করতে এবং বেইজিংয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম করবে।

ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি রিসার্চের ফেলো শেন মিং-শিহ বলেন, তাইওয়ানকে গোয়েন্দা সংগ্রহের সম্পদ এবং কোস্ট গার্ড টহল জাহাজের ব্যবহার জোরদার করতে হবে। নাশকতাকারীদের কঠোর শাস্তি দিয়ে চিনা ক্রুদের মধ্যে ভয় তৈরি করা দরকার। তিনি আরও জানান, সরকারকে সামুদ্রিক নজরদারির জন্য আরও রোটারি এবং কম-গতির ফিক্সড-উইং বিমান সংগ্রহ করতে হবে এবং একাধিক সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার দক্ষতা বাড়াতে হবে।

ঘটনার বিশ্লেষণ
গত মঙ্গলবার ভোর ৩টায় চুংহুয়া টেলিকম তাইপেই-পেঙ্ঘু নং ৩ কেবল কাটার খবর দেয়। সিজিএ জানায়, জাহাজটি গত শনিবার সন্ধ্যা ৭:১০ থেকে তাইনানের চিয়াং চুন মৎস্য বন্দরের উত্তর-পশ্চিমে ৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ঘোরাফেরা করছিল। এটি কেবলের উত্তরে মাত্র ০.৫ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। আনপিং বন্দরের সিগন্যাল স্টেশন সাতবার জাহাজটিকে এলাকা ছাড়তে বললেও কোনো সাড়া পায়নি। সিজিএ খারাপ আবহাওয়ার কারণে জাহাজে উঠতে না পারায় আনপিং বন্দরে নিয়ে আসে।

তদন্তে দেখা গেছে, জাহাজটি একাধিক নাম এবং শনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার করেছে। এর এমএমএসআই নম্বর ছয়টি জাহাজে ব্যবহৃত হয়েছে, যার পাঁচটি গত তিন মাসে তাইওয়ান, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে চলাচল করেছে। চিনা রাষ্ট্রীয় কোম্পানি চায়না কসকো শিপিং এবং জিন লং মেরিটাইম এই জাহাজের সঙ্গে যুক্ত। এই পরিচয়ের অসঙ্গতি তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা তাইওয়ানের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা সমস্যা। সমুদ্রতলের কেবলগুলো তাইওয়ানের প্রধান দ্বীপ এবং পেঙ্ঘু, কিনমেনের মতো প্রান্তিক দ্বীপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখে। এই কেবল কাটার ফলে চুংহুয়া টেলিকম ব্যাকআপ কেবল ব্যবহার করে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তবে, এই ঘটনা তাইওয়ানের অবকাঠামোর দুর্বলতা তুলে ধরেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সম্ভবত চীনের ‘গ্রে জোন’ কৌশলের অংশ, যিনি তাইওয়ানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সরাসরি যুদ্ধ ছাড়াই ব্যাঘাত ঘটায়। পুমা শেন এবং শেন মিং-শিহ উভয়ই বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং কঠোর শাস্তির ওপর জোর দিয়েছেন। তাইওয়ানের নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
তাইওয়ানের জন্য এটি একটি সতর্কতা। গত জানুয়ারিতে আরেকটি চিনা জাহাজ ‘শুনক্সিন৩৯’ একটি কেবল কাটার সন্দেহে তদন্তের মুখে পড়েছিল। এই ঘটনাগুলো একটি প্যাটার্ন নির্দেশ করে। তাইওয়ানকে সমুদ্রিক নজরদারি বাড়াতে এবং বৈশ্বিক মিত্রদের সঙ্গে গোয়েন্দা ভাগাভাগি করতে হবে। চীনের চাপ সত্ত্বেও, তাইওয়ানের অবকাঠামো রক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন অগ্রাধিকার।