কলকাতা: ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্তর্জাতিক স্তরে শুরু হয়েছিল এক সুপরিকল্পিত ভুয়ো প্রচার। লক্ষ্য একটাই-ফরাসি প্রযুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা ধ্বংস করে চিনের যুদ্ধবিমান বিক্রির বাজার তৈরি করা। এই অপপ্রচারের হদিস দিয়েছে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও গোয়েন্দা বিভাগ, জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Associated Press (AP)।
সূত্র অনুযায়ী, মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের চার দিনের সামরিক সংঘর্ষ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ রাফাল ব্যবহারের পরই চিন সক্রিয়ভাবে এক প্রচার-যুদ্ধ শুরু করে। ওই সংঘর্ষে রাফাল ব্যবহারের উচ্চপ্রচার সামনে আসতেই চিনের একাধিক বিদেশি মিশন, বিশেষ করে দূতাবাসগুলির মাধ্যমে শুরু হয় কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি এবং তথ্য বিকৃতি।
‘রাফাল ব্যর্থ’, দাবি করে পাকিস্তান- ফ্রান্স বলল, ‘ভুল তথ্য’
পাকিস্তানের দাবি ছিল, তারা ওই সংঘর্ষে তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে। যদিও Dassault Aviation-এর CEO এরিক ত্রাপিয়ে এই দাবিকে “অত্যন্ত অবাস্তব ও তথ্যভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দেন।
ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ, জেনারেল অনিল চৌহান স্বীকার করেছেন যে কিছু বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তবে রাফাল ভূপতিত হওয়ার দাবি “সম্পূর্ণ অসত্য” বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কৃত্রিম কনটেন্ট, ভিডিও গেমের দৃশ্য, ছবির বিকৃতি China tech propaganda Rafale
ফরাসি গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রকাশ, চিনের প্রতিরক্ষা সংযুক্ত কূটনীতিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাফালের বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে ব্যবহার করেছে-
- এআই দিয়ে বানানো ভুয়ো ছবি ও ভিডিও
- ভিডিও গেমের দৃশ্য, যাকে বাস্তব যুদ্ধ দেখিয়ে প্রচার
- সোশ্যাল মিডিয়ায় মনগড়া পোস্ট, রাফালকে ‘অকার্যকর’ প্রমাণ করতে
- রাফাল ধ্বংসের মিথ্যা ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া
ফরাসি গবেষকরা বলেন, সংঘর্ষের সময় নতুন করে তৈরি হয়েছিল ১,০০০-র বেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, যাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল চিনা প্রযুক্তিকে শ্রেষ্ঠ এবং রাফালকে দুর্বল হিসাবে উপস্থাপন করা।
রাফাল শুধু যুদ্ধবিমান নয়, ফ্রান্সের কৌশলগত প্রতীক: প্রতিরক্ষা মন্ত্রক
ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায়, “রাফালকে লক্ষ্য করা হয়েছে কারণ এটি শুধু একটি যুদ্ধবিমান নয়, বরং ফ্রান্সের কৌশলগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির গুণমান ও আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক।”
মন্ত্রক আরও জানায়, এই প্রোপাগান্ডা একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যার উদ্দেশ্য ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্ক দুর্বল করা।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফ্রান্সের দখল ঠেকাতেই এই প্রচেষ্টা?
Royal United Services Institute (RUSI)-র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, “চিন লক্ষ্য করেছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফ্রান্স তার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। সেই প্রভাব কমাতেই রাফালকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানের অস্ত্র ব্যবহারের ‘কথিত সাফল্য’ দেখিয়ে রাফালের বিশ্বাসযোগ্যতা খর্ব করাই ছিল এই প্রচারের মূল উদ্দেশ্য।”
বিশ্ববাজারে রাফালের দাপট
বর্তমানে Dassault Aviation বিশ্বজুড়ে ৫৩৩টি রাফাল বিক্রি করেছে, যার মধ্যে ৩২৩টি রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানির তালিকায় রয়েছে-মিশর, ভারত, কাতার, গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া, ইউএই, সার্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। উল্লেখযোগ্যভাবে, ইন্দোনেশিয়া ৪২টি রাফাল অর্ডার করেছে এবং আরও অর্ডার দিতে আগ্রহী।
এমন এক সফল যুদ্ধবিমানকে নিশানা করেই চিন আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া, এমনটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ফরাসি গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে।