বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমেরিকাও (USA) মাদকদ্রব্যের মহামারির কবলে। তবে, সম্প্রতি যে মাদকটি আমেরিকার সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, সেটি হলো ফেন্টানিল (Fentanile)। এই সিন্থেটিক ড্রাগটি মূলত ব্যথা-বেদনা উপশমে ব্যবহৃত হয়, তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহার আমেরিকাকে এক অভূতপূর্ব মাদকের সংকটে ফেলেছে। ফেন্টানিল এতটাই শক্তিশালী যে, এটি হেরোইনের তুলনায় ৫০ গুণ বেশি প্রভাবশালী।
পাকিস্তানে মৃত্যু ২৬/১১ হামলার মূলচক্রী মক্কির, কী হয়েছিল হাফিজ-ভগ্নিপতির?
ফেন্টানিল একটি রাসায়নিক ড্রাগ যা প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিশেষত ক্যান্সার বা অন্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে, এর অত্যধিক শক্তি এবং সহজলভ্যতা এটিকে মাদকাসক্তদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। এটির উৎপাদনমূল্যও অত্যন্ত কম, যা এর অবৈধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করছে। এই মাদকের সস্তা উৎপাদন খরচ এবং সহজলভ্যতা তাকে একটি ভয়ানক বিপদে পরিণত করেছে।
তবে, এই মাদকের মূল উৎস কোথায়? কীভাবে আমেরিকায় এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে? উত্তর—চিন (China)। ফেন্টানিলের বেশিরভাগই চীন থেকে আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশে পাচার হয়। ফেন্টানিলের উৎপাদন চীনে অত্যন্ত সস্তা এবং সহজ, যা এটিকে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের জন্য একটি অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত করেছে। চীন থেকে সরবরাহিত এই মাদকটি কখনোই সরাসরি আমেরিকায় পৌঁছায় না, বরং এটি মেক্সিকো এবং কানাডার মাধ্যমে আমেরিকায় পাচার হয়।
এই অবস্থা আমেরিকার সরকারের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেন্টানিলের অতিরিক্ত সেবন আমেরিকায় ২০০ জনের মৃত্যু দৈনিক ঘটাচ্ছে এবং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংকটের রূপ নিয়েছে। ২০১৯ সালে, আমেরিকার প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ ফেন্টানিল এবং অন্যান্য সিন্থেটিক ড্রাগের অতিরিক্ত সেবনের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। এই অবস্থা এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন।
‘ইতিহাস আমার প্রতি সদয় থাকবে’, বলেছিলেন মনমোহন
ফেন্টানিলের বিস্তার এবং এই সমস্যার গভীরতা দেখে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, তিনি চিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করবেন। ট্রাম্পের মতে, চীন যদি এই ধরনের মাদক পাচার বন্ধ না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার বক্তব্য ছিল, ‘‘মেক্সিকো এবং কানাডার মাধ্যমে ফেন্টানিলের অবৈধ প্রবাহ আমেরিকাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’’
ফেন্টানিলের সমস্যা আমেরিকায় কখন শুরু হয়েছিল? এটি প্রথমে একটি ছোট সমস্যা ছিল, তবে ২০১০ সালের পর এর ব্যবহার বাড়তে শুরু করে, বিশেষত মেক্সিকো এবং চীন থেকে পাচার হওয়ার পর। চীনের কিছু সিন্থেটিক মাদক তৈরিকারক কোম্পানি এবং পাচারকারীরা আমেরিকান বাজারে ফেন্টানিল সরবরাহ শুরু করেছিল, যা খুব দ্রুত বড় আকার ধারণ করে। মেক্সিকোতে এই মাদকটি প্রক্রিয়াকৃত হয়ে আমেরিকার বিভিন্ন অংশে পাচার করা হয়।
ফেন্টানিলের সংক্রমণ এতটাই দ্রুত ছিল যে, এটি শুধু মাদকাসক্তদের জীবনই বিপন্ন করেনি, বরং সমাজের নানা স্তরের মানুষের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এজেন্সি এবং স্থানীয় পুলিশ এ ধরনের পাচারকারী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করলেও, ফেন্টানিলের বিস্তার কমাতে তেমন কার্যকর কোনো ফল আসেনি।
মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, শনিবার শেষকৃত্য
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমেরিকা কীভাবে এই মাদক মহামারি মোকাবিলা করবে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাস্তিমূলক বাণিজ্য শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপগুলির পাশাপাশি, আমেরিকান সরকার মাদক পাচারকারী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করছে এবং ফেন্টানিলের পাচার বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছে। তবে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গেলে শুধুমাত্র সরকার নয়, সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন।