ট্রাম্পের ট্যারিফ হুমকির জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া চীনের

China slammed america

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিআরআইসিএস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) দেশগুলির (China) “আমেরিকা-বিরোধী” নীতির সমর্থনকারী দেশগুলির উপর অতিরিক্ত ১০% ট্যারিফ আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এর জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বিআরআইসিএস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি।

Advertisements

এর সহযোগিতা (China) উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে লক্ষ্য করে নয়। ট্যারিফের বিষয়ে, আমরা ধারাবাহিকভাবে ট্যারিফ যুদ্ধ এবং বাণিজ্য যুদ্ধের বিরোধিতা করে এসেছি। আমরা ট্যারিফকে জবরদস্তি ও চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে। নির্বিচারে ট্যারিফ আরোপ কোনো পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে না।”

   

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (China) এই হুমকি বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, বিআরআইসিএস দেশগুলির কিছু নীতি আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, এবং যেসব দেশ এই নীতিগুলিকে সমর্থন করবে, তাদের উপর অতিরিক্ত ১০% ট্যারিফ আরোপ করা হবে।

এই হুমকি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিআরআইসিএস (China) জোট বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালে বিআরআইসিএস-এর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বের জিডিপির প্রায় ৩২% এবং জনসংখ্যার ৪৫% প্রতিনিধিত্ব করে।

চীনের (China) বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জোর দিয়ে বলেন, বিআরআইসিএস কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সহযোগিতা, উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা প্রচারের জন্য কাজ করে। তিনি বলেন, “বিআরআইসিএস-এর সহযোগিতা স্বচ্ছ এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত।

এটি কোনো দেশকে লক্ষ্য করে নয়, বরং বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে।” মাও নিং ট্যারিফ যুদ্ধের বিরুদ্ধে চীনের দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “ট্যারিফকে জবরদস্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা কোনো পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে না। এটি বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।”

চীন (China) ধারাবাহিকভাবে মুক্ত বাণিজ্য এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পক্ষে কথা বলে এসেছে। মাও নিং-এর এই মন্তব্য ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে একটি কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া, যা বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানায়।ট্রাম্পের প্রশাসন এর আগেও চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশের উপর ট্যারিফ আরোপ করেছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

২০১৮-২০১৯ সালে মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের সময় চীনের (China) পণ্যের উপর ২৫% পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছিল, যার ফলে উভয় দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই নতুন হুমকি বিআরআইসিএস দেশগুলির সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দেয়।বিআরআইসিএস জোট গত কয়েক বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালে এই জোটে নতুন সদস্য হিসেবে ইরান, মিশর, ইথিওপিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব যোগ দিয়েছে, যা এর প্রভাবকে আরও বাড়িয়েছে। বিআরআইসিএস-এর নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এনডিবি) উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য পরিকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে, যা পশ্চিমা-নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।

Advertisements

এই প্রেক্ষাপটে, (China) ট্রাম্পের ট্যারিফ হুমকিকে অনেকে বিআরআইসিএস-এর ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে মার্কিন কৌশল হিসেবে দেখছেন।ভারত, বিআরআইসিএস-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে, এই পরিস্থিতিতে একটি সূক্ষ্ম ভূমিকা পালন করছে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখলেও বিআরআইসিএস-এর মাধ্যমে চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

ট্রাম্পের (China) এই হুমকি ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, কারণ এটি ভারতের রপ্তানি, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের জন্য এই ট্যারিফ হুমকি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি বাজারগুলির একটি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের মার্কিন রপ্তানি ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, আইটি পরিষেবা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উল্লেখযোগ্য। অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ট্যারিফ আরোপ এই খাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (China) সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ২০২৪-২৫ সালে ২৩,৬২২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা বিশ্ব বাজারে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্পের এই হুমকি বিআরআইসিএস দেশগুলির মধ্যে একত্রিত প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

রাশিয়া, চীন(China) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলি ইতিমধ্যে মার্কিন একতরফা নীতির সমালোচনা করেছে। রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ধরনের ট্যারিফ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারে। ভারত এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ট্রাম্পের ট্যারিফ হুমকি বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

বিআরআইসিএস দেশগুলি এই হুমকির বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন গতিশীলতা আনবে। ভারতের জন্য এটি একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ, কারণ দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি বিআরআইসিএস-এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চায়।

‘২১ জুলাই মঞ্চে থাকব’, দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে তোলপাড় বিজেপি শিবিরে

চীনের (China) মুখপাত্র মাও নিং-এর বক্তব্য বিআরআইসিএস-এর ইতিবাচক ভূমিকা এবং ট্যারিফ যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকে তুলে ধরেছে। এই পরিস্থিতি আগামী দিনে বিশ্ব বাণিজ্য এবং কূটনীতিতে নতুন মোড় নিয়ে আসতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে, এই ঘটনা ভারতের অর্থনৈতিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা রাজ্যের রপ্তানি-নির্ভর শিল্প, যেমন আইটি এবং টেক্সটাইল, উপর প্রভাব ফেলবে।