মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে চীন

চিন পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২২,০০০ মাইল উপরে মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন (Solar Power) করার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা করছে, যা “স্পেস সোলার পাওয়ার স্টেশন”…

China Plans to Harness Solar Power from Space

চিন পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২২,০০০ মাইল উপরে মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন (Solar Power) করার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা করছে, যা “স্পেস সোলার পাওয়ার স্টেশন” বা মহাশূন্য সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নামে পরিচিত। এই প্রকল্পটি পৃথিবীর কক্ষপথে সৌর শক্তির সরবরাহ করার মাধ্যমে একটি স্থায়ী এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদনের ধারণা নিয়ে কাজ করছে। চিন ২০৩০ সালের মধ্যে এর প্রথম পরীক্ষামূলক সংস্করণটি বাস্তবায়ন করতে চায়।

কিভাবে কাজ করবে এই সিস্টেম:
1. সৌর প্যানেল স্থাপন: পৃথিবী থেকে প্রায় ২২,০০০ মাইল উপরে (বা ৩৬,০০০ কিলোমিটার) একটি সুষম কক্ষপথে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হবে। এই অবস্থানে সূর্যের আলো সরাসরি এবং অবিরত পাওয়া যাবে, যেহেতু পৃথিবীর পরিবেশ বা রাত্রিকাল সৌর প্যানেলগুলোকে আচ্ছাদিত করবে না।

   

2. বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সংরক্ষণ: সৌর প্যানেলগুলিতে সোলার শক্তি শোষণ করা হবে, এবং তা থেকে তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য নির্দিষ্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে মাইক্রোওয়েভ বা লেজারের মাধ্যমে শক্তি পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য।

3. শক্তি পৃথিবীতে ফিরে পাঠানো: মহাশূন্যে উৎপন্ন শক্তি পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছাতে “মাইক্রোওয়েভ বা লেজার” প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এই শক্তি পৃথিবীতে একটি গ্রহণকারী স্টেশন দ্বারা গ্রহণ করা হবে, যা তারপরে সেই শক্তিকে বিদ্যুৎতে রূপান্তর করবে এবং গ্রিডে যোগ করবে।

4. উপকারিতা: মহাশূন্যে সৌর শক্তি উৎপাদন করার মাধ্যমে মেঘ, বৃষ্টি, বা রাতের অন্ধকারের প্রভাব ছাড়া সবসময় সোজাসুজি সূর্য থেকে শক্তি পাওয়া যাবে। এতে অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য শক্তির উৎস পাওয়া যাবে।

চ্যালেঞ্জ:
• প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ: মহাশূন্যে সৌর প্যানেল স্থাপন এবং শক্তি পৃথিবীতে পাঠানো একটি অত্যন্ত জটিল প্রযুক্তি। এটি অত্যন্ত উচ্চমানের প্রযুক্তি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।
• খরচ: এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় অত্যন্ত বেশি, কারণ মহাশূন্যে উপকরণ পাঠাতে এবং সৌর প্যানেল তৈরি করতে অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি ও বিপুল পরিমাণ রিসোর্স প্রয়োজন।
• নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা: মাইক্রোওয়েভ বা লেজার ব্যবহার করে শক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে তা পরিবেশ বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

চিনের উদ্দেশ্য:
চিন এই প্রকল্পের মাধ্যমে বৈশ্বিক শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং শক্তিশালী শক্তির উৎস তৈরি করতে চায়। এটি তাদের পরিবেশগত লক্ষ্য এবং শক্তির উৎসে বৈচিত্র্য আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই মহাশূন্য সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটি চিনের জন্য একটি বড় ধরনের প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ হতে পারে, তবে এটি বাস্তবায়ন করতে অনেক সময়, গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হবে।