ভারতকে বাদ দিয়েই দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে চীন ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের ইংরেজি সংবাদপত্র The Express Tribune-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের মধ্যে এই নতুন জোট গঠন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কুনমিংয়ে বৈঠক, ছিল বাংলাদেশও
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯ জুন চীনের কুনমিং শহরে এই নতুন জোট গঠন নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিল বাংলাদেশ-ও। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, SAARC-এর সদস্য দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি নতুন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যার নেতৃত্বে থাকবে চীন ও পাকিস্তান।
এর আগে মে মাসে চীন-পাকিস্তান-আফগানিস্তানের একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও হয়, যেখানে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC) সম্প্রসারণ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে।
বাংলাদেশ কী বলছে? জোট নয়, বলছে ‘অফিশিয়াল মিটিং’ china pakistan south asia alliance
তবে ঢাকা এই সম্ভাব্য নতুন জোটের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বাংলাদেশের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন জানান, “এটি কোনও রাজনৈতিক বৈঠক নয়, বরং একটি অফিসিয়াল স্তরের আলোচনার অংশ ছিল মাত্র।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা কোনও জোট গঠন করছি না।”
SAARC: যে জোট কার্যত অচল হয়ে পড়েছে
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় South Asian Association for Regional Cooperation (SAARC)। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই সাতটি দেশ ছিল প্রাথমিক সদস্য। পরে ২০০৭ সালে আফগানিস্তান যোগ দেয়।
তবে ২০১৬ সালের উরি সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দোষী সাব্যস্ত করে SAARC-এর ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করে। এরপর একে একে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও ভুটান-ও সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকেই SAARC কার্যত অচল হয়ে রয়েছে।
ভারতের উদ্যোগ, পাকিস্তানের বাধা
ভারত SAARC-এর মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সংযোগের চেষ্টা করলেও পাকিস্তান তা বারবার ভেটো দিয়ে রুখে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে কাঠমান্ডু সম্মেলনে SAARC মোটর ভেহিকল চুক্তি আটকে দেয় ইসলামাবাদ, যা ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান পরবর্তীতে BBIN চুক্তি করে আলাদাভাবে চালু করে।
এছাড়া সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও SAARC-এর আওতায় যৌথ মঞ্চ গঠনের প্রস্তাব পাকিস্তান নাকচ করে।
চীন-পাকিস্তানের লক্ষ্য কী?
The Express Tribune-এর দাবি, চীন ও পাকিস্তান মনে করছে SAARC কার্যত মৃত, তাই সময় এসেছে নতুন আঞ্চলিক সংযোগ ও অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, এমনকি আফগানিস্তানকেও এই সম্ভাব্য জোটে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
তবে কূটনৈতিক মহলের মতে, ভারতের ভিন্নমত এবং ভূরাজনৈতিক অবস্থান এই নতুন জোটে ভারতের অংশগ্রহণ অসম্ভব করে তুলবে।
ভারতের ভূমিকায় কী প্রভাব পড়বে?
SAARC-এ ভারত ছিল সবচেয়ে বড় অর্থদাতা ও উদ্যোগ গ্রহণকারী দেশ। SAARC ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, South Asian University, এবং কোভিডকালীন SAARC ইমার্জেন্সি ফান্ড—সব ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিয়েছিল দিল্লি।
তবে চীন ও পাকিস্তানের নতুন কৌশলে ভারতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।