গোপনে পরমাণু পরীক্ষা চালাচ্ছে চিন–পাকিস্তান: বিস্ফোরক দাবি ট্রাম্পের

china pakistan secret nuclear testing

আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে নতুন সঙ্কেত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চিন ও পাকিস্তান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। রবিবার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল CBS-এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 60 Minutes-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, শুধু রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়াই নয়, পাকিস্তান ও চিনও নীরবে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, “তারা পরীক্ষা করে, কিন্তু প্রকাশ্যে বলে না।”

Advertisements

ট্রাম্পের বক্তব্য, “রাশিয়া পরীক্ষা করছে, চিনও করছে। আমরা খোলামেলা সমাজে বাস করি, কিন্তু তারা নয়। তাদের দেশে এমন কোনও সাংবাদিক নেই যে এ নিয়ে রিপোর্ট করবে।”

   

এই মন্তব্যের মধ্যেই তিনি জানান, তিন দশকেরও বেশি সময় পরে আমেরিকাও পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে চলেছে, এবং সেই নির্দেশ তিনি নিজে দিয়েছেন।

‘ভারত-পাকিস্তান তখন যুদ্ধের মুখে ছিল’

একই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত ও পাকিস্তান কয়েক মাস আগেই পারমাণবিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, যা তিনি কূটনৈতিক হস্তক্ষেপে থামাতে সক্ষম হন।

তাঁর ভাষায়, “ভারত তখন পাকিস্তানের সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধে নামতে চলেছিল। বিমান গুলি পড়ছিল, উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। আমি দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট জানিয়েছিলাম—যদি যুদ্ধ না থামাও, তবে আমেরিকার সঙ্গে কোনও বাণিজ্য থাকবে না। না হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাত।”

‘ভূগর্ভে এমনভাবে পরীক্ষা চালানো হয় যাতে ধরা না পড়ে’

ট্রাম্পের মতে, পারমাণবিক পরীক্ষাগুলি এমন গভীরে পরিচালিত হয় যে আন্তর্জাতিক মনিটরিং সিস্টেম সহজে তা ধরতে পারে না। “তারা এমন জায়গায় পরীক্ষা চালায় যেখানে শুধু হালকা কম্পন অনুভূত হয়, কিন্তু ঠিক কোথায় হচ্ছে তা বোঝা যায় না,” বলেন ট্রাম্প।

যদিও বিশ্বজুড়ে Comprehensive Nuclear-Test-Ban Treaty Organization (CTBTO)-এর মনিটরিং স্টেশনগুলো সাধারণত ভূকম্পনের তরঙ্গ থেকে এমন বিস্ফোরণ শনাক্ত করতে পারে, তবুও ট্রাম্পের মন্তব্যে স্পষ্ট, তিনি বিশ্বাস করেন, চিন ও পাকিস্তান গোপনে পারমাণবিক পরীক্ষায় লিপ্ত।

Advertisements

ভারতের জন্য নতুন উদ্বেগ

ট্রাম্পের দাবি ভারতের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ দুই ফ্রন্টেই — চিন ও পাকিস্তান — পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি ভারত।
ভারত ১৯৯৮ সালের পোখরান-২ পরীক্ষার পর থেকে ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতি মেনে চলছে। বর্তমানে ভারতের হাতে আনুমানিক ১৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড, যেখানে পাকিস্তানের রয়েছে প্রায় ১৭০, আর চিন ইতিমধ্যেই ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১,০০০ ছাড়াতে পারে বলে অনুমান।

চিনের উন্নত প্রযুক্তি ও ভারতের চ্যালেঞ্জ

চিনের সাম্প্রতিক Fractional Orbital Bombardment System (FOBS) প্রযুক্তি ভারতের জন্য বড় কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ। এই ব্যবস্থা ওয়ারহেডকে আংশিক পৃথিবীপথে পাঠিয়ে প্রতিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যেতে পারে। ভারতের Prithvi Defence Vehicle (PDV) সিস্টেম এখনও সেই মানে পৌঁছায়নি।

এছাড়া, ১৯৯৮ সালের পোখরান পরীক্ষায় ভারতের থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা কতটা কার্যকর ছিল, তা নিয়েও এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানী কে. সন্থানম সে সময় পরীক্ষাটিকে ‘ফিজল’ বলে বর্ণনা করেছিলেন — তাঁর দাবি, প্রত্যাশিত ২০০ কিলোটনের বদলে ফলাফল ছিল মাত্র ১৫ কিলোটন।

‘পোখরান-৩’-এর আলোচনায় ফের আগুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতের কৌশলগত পরিসরে নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজের পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার কথা বলছে, তখন ভারতও হয়তো ভাবতে পারে ‘পোখরান-৩’-এর সম্ভাবনা নিয়ে।

এমন একটি পদক্ষেপ ভারতের হাইড্রোজেন বোমার কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে, পাশাপাশি ভবিষ্যতের অগ্নি-৬ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং কে-৫ সাবমেরিন লঞ্চড মিসাইল-এর মতো প্রকল্পে ক্ষুদ্র কিন্তু শক্তিশালী ওয়ারহেড নির্মাণে সহায়তা করবে।

বিশ্ব কূটনীতিতে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ইঙ্গিত

ট্রাম্পের এই প্রকাশ্য দাবি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, বৈশ্বিক কূটনীতিতেও নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। পাকিস্তান ও চিনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক পরীক্ষার অভিযোগ আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের আবহ তৈরি করছে, যেখানে ভারতও বাধ্য হয়ে আরও সক্রিয় কৌশলগত অবস্থান নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।