সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি বিশ্ব বিখ্যাত পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র চেরনোবিল। সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর এটি ইউক্রেনের অধীন। পড়শি দেশটির সঙ্গে চলমান সংঘাতের মাঝে চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রে রুশ সেনার হামলা হয়েছে। গত দু বছর ধরে রুশ ইউক্রেন সংঘাত চলছে। দুই পক্ষের হতাহত বাড়ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার দাবি করেছেন উচ্চ-বিস্ফোরক ওয়ারহেড সহ একটি রাশিয়ান ড্রোন কিয়েভ অঞ্চলের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আছড়ে পড়ে। তবে এই দাবি অস্বীকার করেন রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, রাশিয়ান সামরিক বাহিনী এই ধরণের কার্যকলাপ করবে না। পরমাণু পরিকাঠামো, পারমাণবিক শক্তি সুবিধাগুলিতে আঘাত করার বিষয়ে কোনও কথা নেই, এই জাতীয় কোনও দাবি সত্য নয়।
Last night, a Russian attack drone with a high-explosive warhead struck the shelter protecting the world from radiation at the destroyed 4th power unit of the Chornobyl Nuclear Power Plant.
This shelter was built by Ukraine together with other countries of Europe and the world,… pic.twitter.com/mLTGeDYgPT
— Volodymyr Zelenskyy / Володимир Зеленський (@ZelenskyyUa) February 14, 2025
ইউএন ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি অনুসারে, চেরনোবিলে স্থানীয় সময় 1:50 মিনিটে (2350 GMT) হামলা হয়েছিল। চেরনোবিলে হামলা ফের পরমাণু বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকছে। X-এর একটি পোস্টে IAEA প্রধান রাফায়েল রসি বলেছেন চেরনোবিল হামলা এবং জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টের কাছে সামরিক কার্যকলাপের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি নিরন্তর পারমাণবিক নিরাপত্তা ঝুঁকির উপর ভিত্তি করেছে।
1986 সালের চেরনোবিল বিপর্যয়ের পরপরই প্ল্যান্টের চতুর্থ চুল্লিতে অভ্যন্তরীণ স্তর স্থাপন করা হয়েছিল, যা পারমাণবিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়।
চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে 1986 সালের 26 এপ্রিল স্থানীয় সময় অনুযায়ী রাত 1টা 23 মিনিটে ইউক্রেন ও বেলারুশ সীমান্তে অবস্থিত পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চতুর্থ চুল্লি থেকেই দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। দুটি বিস্ফোরণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চতুর্থ পারমাণবিক চুল্লির ওপরের প্রায় এক হাজার টন ওজনের কংক্রিটের ঢাকনা সরে যায় এবং ছাদ ভেঙে যাওয়ার ফলে এক বিশাল গহ্বরের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার ২০ ঘণ্টা পর বাইরের বাতাস ঢুকে পড়লে পারমাণবিক চুল্লীর দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে সেখানে বিরাট অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এই আগুন ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এতে করে পারমাণবিক বিক্রিয়ায় তৈরি পদার্থ পরিবেশে প্রায় ১ কিলোমিটার উঁচু অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল এবং প্রচুর পারমাণবিক ধুলো পরিবেশের ব্যাপক দূষণ ঘটিয়েছিল।
বিশেষ়জ্ঞরা বলেছেন পরিবেশে যে পরিমাণে পারমাণবিক পদার্থ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল তা ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিক্ষিপ্ত প্রায় পাঁচশটি পারমাণবিক বোমার সমান। এই দুর্ঘটনার ফলে উদ্ভূত পারমাণবিক ভাবে সক্রিয় মেঘটি ইউক্রেন, বেলারুশিয়া, রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে, গ্রেট ব্রিটেনে এমন কি পূর্ব আমেরিকার ওপর পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিল।