কানাডায় হিন্দু মন্দিরে খালিস্তানি প্রতিবাদ, পুলিশ কর্মকর্তা সাসপেন্ড

কানাডার ব্রাম্পটনে একটি হিন্দু মন্দিরের সামনে খালিস্তানি পন্থী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা (Harinder Sohi) সাসপেন্ড হয়েছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়,…

Harinder Sohi

কানাডার ব্রাম্পটনে একটি হিন্দু মন্দিরের সামনে খালিস্তানি পন্থী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা (Harinder Sohi) সাসপেন্ড হয়েছেন। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ওই পুলিশ কর্মকর্তা, হারিন্দর সোহি,(Harinder Sohi)  খালিস্তান পতাকা হাতে নিয়ে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করছেন এবং অন্যরা ভারতের বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং কানাডার পুলিশ কর্তৃপক্ষ এটি গভীরভাবে তদন্ত শুরু করেছে।

ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর, পিল রিজিওনাল পুলিশ কর্মকর্তারা জানায় যে, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি তাদের বাহিনীর একজন কর্মকর্তা। পুলিশ জানায়, হারিন্দর সোহি, (Harinder Sohi) যিনি পিল রিজিওনাল পুলিশের সার্জেন্ট ছিলেন, ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি খালিস্তান পতাকা উঁচু করে ধরেছিলেন এবং প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছিলেন, যেখানে অন্যরা ভারত বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল। এই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা সোহিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।

   

পিল পুলিশ বিভাগে তদন্ত শুরু
পিল রিজিওনাল পুলিশের মিডিয়া রিলেশনস অফিসার রিচার্ড চিন এক ইমেইল বার্তায় সিবিসি নিউজকে জানান, “আমরা একটি ভিডিও সম্পর্কে অবগত আছি, যাতে একজন অফ-ডিউটি পুলিশ কর্মকর্তা একটি প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “এই পুলিশ কর্মকর্তাকে কমিউনিটি সেফটি অ্যান্ড পুলিশিং অ্যাক্টের আওতায় সাসপেন্ড করা হয়েছে।” “আমরা ভিডিওতে দেখানো পরিস্থিতির ব্যাপক তদন্ত করছি এবং তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আরও কোনো তথ্য দিতে পারব না,” চিন জানান।

এই প্রতিবাদটি আরও তীব্র হয়ে ওঠে যখন ভারতীয় কনস্যুলার কর্মকর্তারা হিন্দু সাভা মন্দির পরিদর্শনে আসেন। প্রতিবাদকারীরা খালিস্তান, একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিকে সমর্থনকারী ব্যানার বহন করছিলেন, এবং তারা ভারতের জাতীয় পতাকা বহনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রতিবাদকারীরা একে অপরের দিকে লাঠি, বাঁশ দিয়ে আঘাত করছে এবং হাতাহাতি করছে। এর ফলে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রতিবাদটি মন্দির থেকে পাশের মিসিসাগায় সরিয়ে নেওয়া হয়।

পিল পুলিশ জানায়, তারা ওই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জননিরাপত্তা রক্ষার জন্য মন্দিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছিল। পুলিশ কর্তৃপক্ষ আবারও জানায়, তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে শ্রদ্ধা জানায়, তবে সহিংসতা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সহ্য করবে না।

কানাডার বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নেতারা এই সহিংস ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রী, এবং অন্যান্য রাজ্যপালরা এই ঘটনাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য” বলে মন্তব্য করেছেন।

কানাডায় ভারতীয় দূতাবাস এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। মোদী বলেন, “আমি কানাডায় একটি হিন্দু মন্দিরের বিরুদ্ধে পরিক্রমিত আক্রমণ নিন্দা জানাই। এই ধরনের সহিংসতা কখনোই ভারতের দৃঢ় সংকল্পকে দুর্বল করতে পারবে না।”

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক টুইটে বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণ, যা ধর্মীয় স্থানে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমরা কানাডা সরকারের কাছ থেকে এর জন্য জবাবদিহি চাই এবং আশা করি তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে পদক্ষেপ নেবে।”

এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, বিশেষত কানাডার বিভিন্ন রাজনীতিকদের মাঝে যা খালিস্তান সমর্থকদের প্রতি সহানুভূতির অভিযোগ তুলছে। এর মধ্যে রয়েছে কানাডার কিছু রাজনীতিক যারা খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়, যা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি স্পর্শকাতর বিষয়।

এছাড়া, ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের মধ্যেও বর্তমানে একাধিক উদ্বেগজনক বিষয় দেখা যাচ্ছে। কানাডায় শিখ সম্প্রদায়ের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরেই খালিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে আসছে, যা ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে। এর ফলে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বারবার কানাডাকে এই ধরনের সমর্থন বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।

ভারত- কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও এই ধরনের ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে, এবং দুই দেশই একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় যে তারা শান্তি ও আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কানাডা পুলিশ তাদের কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করে এবং তদন্ত শুরু করে, এটি তাদের কমিউনিটি সেফটি এবং আইনের শাসনের প্রতি নিবদ্ধ থাকার অঙ্গীকারের অংশ। পুলিশ জানায় যে তারা এই ধরনের সহিংসতা ও আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

এদিকে, ভারতে এই ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কানাডা সরকারকেও এই ঘটনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।