জেলে ভিড় কমাতে ভারতীয় অপরাধী ফেরত পাঠাবে ব্রিটেন

ব্রিটেন সরকার ( Britain) তাদের ‘এখন নির্বাসন, পরে আপিল’ (Deport Now, Appeal Later) নীতি প্রসারিত করে ভারত সহ ২৩টি দেশকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই…

Britain govt new rule for convicts

ব্রিটেন সরকার ( Britain) তাদের ‘এখন নির্বাসন, পরে আপিল’ (Deport Now, Appeal Later) নীতি প্রসারিত করে ভারত সহ ২৩টি দেশকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই নীতির আওতায় ব্রিটেনে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বিদেশি নাগরিকদের সাজা ঘোষণার পরপরই তাদের নিজ দেশে নির্বাসন করা হবে।

তারা বিদেশ থেকে ভিডিও হিয়ারিংয়ের মাধ্যমে আপিল করতে পারবেন। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হল অপরাধীদের আপিল প্রক্রিয়ার অজুহাতে ব্রিটেনে দীর্ঘদিন থাকার সুযোগ বন্ধ করা, কারাগারের ভিড় কমানো এবং করদাতাদের আর্থিক বোঝা হ্রাস করা।

   

এই তালিকায় ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, বুলগেরিয়া, লাটভিয়া, লেবানন, উগান্ডা, জাম্বিয়া সহ আরও ১৫টি দেশ যুক্ত হয়েছে। এই নীতি ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কী অর্থ বহন করে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

ব্রিটেনের হোম অফিস গত রবিবার ঘোষণা করেছে যে, এই নীতি, যা ২০১৪ সালে কনজারভেটিভ সরকারের আমলে প্রথম চালু হয়েছিল এবং ২০২৩ সালে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, এখন ৮টি দেশ থেকে বাড়িয়ে ২৩টি দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই নীতির অধীনে, যেসব বিদেশি নাগরিক ব্রিটেনে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং তাদের মানবাধিকার দাবি প্রত্যাখ্যাত হবে।

তাদের সাজা ঘোষণার পরপরই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তারা নিজ দেশ থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আপিলের শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন। হোম সেক্রেটারি ইয়েভেট কুপার বলেছেন, “অনেক দিন ধরে বিদেশি অপরাধীরা আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার করে আপিল প্রক্রিয়ার নামে যুক্তরাজ্যে থেকে যাচ্ছেন। এটি বন্ধ করতে হবে।”

ব্রিটেন সরকারের মতে, এই নীতির লক্ষ্য হল কারাগারে বিদেশি অপরাধীদের সংখ্যা কমানো এবং জনসাধারণের অর্থ সাশ্রয় করা। বর্তমানে ব্রিটেনের কারাগারে প্রায় ১২ শতাংশ বন্দী বিদেশি নাগরিক, এবং প্রতি বন্দীর জন্য বছরে গড়ে ৫৪,০০০ পাউন্ড খরচ হয়। এই নীতির মাধ্যমে সরকার অভিবাসন ব্যবস্থার উপর চাপ কমাতে এবং জননিরাপত্তা জোরদার করতে চায়।

এছাড়া, সরকার ঘোষণা করেছে যে, সাধারণ অপরাধে দোষী বিদেশি বন্দীদের সাজার মাত্র ৩০ শতাংশ সময় পূর্ণ করার পরই নির্বাসন করা যাবে, যা আগে ছিল ৫০ শতাংশ। তবে, সন্ত্রাসবাদ বা হত্যার মতো গুরুতর অপরাধে দোষী ব্যক্তিদের পুরো সাজা ভোগ করতে হবে।

Advertisements

ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই নীতি তাৎক্ষণিক নির্বাসনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। যুক্তরাজ্যের মিনিস্ট্রি অফ জাস্টিসের তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০২৫ পর্যন্ত নতুন তালিকাভুক্ত ১৫টি দেশের মধ্যে ভারতীয় বন্দীরা কারাগারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন।

এই নীতি ভারতীয় অপরাধীদের দ্রুত নির্বাসনের মাধ্যমে ব্রিটেনের কারাগার ব্যবস্থার উপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে। তবে, এই নীতির সমালোচনাও হচ্ছে। প্রাক্তন বিচার সচিব অ্যালেক্স চক এবং রবার্ট বাকল্যান্ড সতর্ক করে বলেছেন, এটি বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে এবং কিছু অপরাধী শাস্তি এড়াতে পারে।

এই নীতি ২০১৪ সালে প্রথম চালু হয়েছিল, কিন্তু ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট এটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল, কারণ এটি অপরাধীদের সশরীরে আপিলে সাক্ষ্য দেওয়ার অধিকারকে সীমিত করছিল। তবে, ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আপিলের ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ২০২৩ সালে তৎকালীন হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এটি পুনরায় চালু করেন। সমালোচকরা বলছেন, নির্বাসিত অপরাধীদের নিজ দেশে সাজা ভোগ করার কোনও নিশ্চয়তা নেই, যা বিচারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ব্রিটেন সরকার এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য ৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে, যা ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের প্রায় ৮০টি কারাগারে বিশেষজ্ঞ কর্মী নিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হবে। হোম অফিস জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫,২০০ বিদেশি অপরাধী নির্বাসিত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। বিদেশ সচিব ডেভিড ল্যামি বলেছেন, “আমরা আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করছি।”

ভিডিও প্রকাশ করে কুণালের তোপ, ‘তিলোত্তমার বাবার বক্তব্য মিথ্যা’

ভারতের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের কূটনৈতিক দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। এই নীতি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তার দিক থেকে যুক্তরাজ্যের জন্য উপকারী হলেও, এটি মানবাধিকার এবং বিচারের নীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য এটি ব্রিটেনে অপরাধের পরিণতি আরও কঠোর করবে।