Breaking News: নেপাল আবারও এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-সহ একাধিক জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক অসন্তোষ। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ’ বলে অভিহিত করে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভ প্রথমে শান্তিপূর্ণ থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে, পরে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। পুলিশি গুলিতে এখনও পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের, যাঁরা নিজেদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের অধিকার রক্ষায় পথে নেমেছিলেন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখাক। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, “দেশে চলমান সহিংসতার জন্য আমি দায় নিচ্ছি। গণতন্ত্রে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত। আমি জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তাঁর এই পদত্যাগে নেপালের রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি সরকারের ব্যর্থতার সরাসরি স্বীকৃতি। বিরোধী দলগুলো এই পদত্যাগকে আন্দোলনের বিজয় বলে দাবি করছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই সাময়িকভাবে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো বন্ধ করা হয়েছিল। তথাকথিত ‘ভুয়া খবর’ এবং ‘বিদ্বেষমূলক প্রচার’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়। কিন্তু জনসাধারণ ও নাগরিক সমাজ একে দেখছে সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব হিসেবে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নেপালের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাও এক বিবৃতিতে বলেছে, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মৌলিক স্তম্ভ। সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করা এবং বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানো উদ্বেগজনক।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালের এই পরিস্থিতি কেবলমাত্র একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে জনঅসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা রাজনৈতিক হতাশা, বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার ফল। তরুণ প্রজন্ম, যারা ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমে বেশি সক্রিয়, তারা নিজেদের অধিকার হরণে আর নীরব থাকতে চাইছে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের পর আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিক্ষোভ থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আন্দোলনকারীরা আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার অপসারণ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো পুনরায় চালুর দাবিতে অনড়। সরকারের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যারা পুলিশি গুলির ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করবে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই পদত্যাগে কি আদৌ বদলাবে নেপালের রাজনৈতিক দৃশ্যপট? না কি এটি কেবলমাত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল? জনতার ক্ষোভ ও বিক্ষোভের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সরকারের—কীভাবে তারা সংকট মোকাবিলা করে দেশে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করবে।
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রয়োজন সুসংহত রাজনৈতিক উদ্যোগ, খোলামেলা সংলাপ এবং সর্বোপরি জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি প্রশাসন। না হলে এই অস্থিরতা আরও দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে, যার প্রভাব পড়বে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়।