পুলওয়ামার স্মৃতি উসকে তুরবাতে সেনাবাহিনীর বাসে বিস্ফোরণ

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা (Pulwama Attack) চালানো হয়েছিল। বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি সেনাবাহিনীর গাড়িতে ধাক্কা মারে। প্রাণ হারান ৪০…

Blast in Turbat Reminds of Pulwama Attack, Pakistani Military Bus Targeted in Remote-Control Bombing

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা (Pulwama Attack) চালানো হয়েছিল। বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি সেনাবাহিনীর গাড়িতে ধাক্কা মারে। প্রাণ হারান ৪০ জন জওয়ান। সেই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত হয়ে রয়েছে। আর ঠিক পাঁচ বছর পর, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের বালোচিস্তানের তুরবাতে ঘটল আরেকটি ভয়ঙ্কর হামলা।

তুরবাতে একটি সেনাবাহিনীর বাসে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে পুলওয়ামার ঘটনার সঙ্গে তুরবাতের বিস্ফোরণের ধরণে রয়েছে বড় পার্থক্য। পুলওয়ামায় ব্যবহার করা হয়েছিল বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি এবং আত্মঘাতী জঙ্গি। অন্যদিকে, তুরবাতের হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল রিমোট-চালিত বোমা।

   

বালোচিস্তানে বিস্ফোরণ: কী ঘটেছিল?
বালোচিস্তানের তুরবাত এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বাসকে লক্ষ্য করে রিমোট-চালিত বোমা দিয়ে আক্রমণ করা হয়। এই বিস্ফোরণে বহু সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অনেকেই। বাসটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। নিহতদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি, তবে স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়েছে যে সংখ্যাটা বেশ বড় হতে পারে।

ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী এবং অ্যাম্বুলেন্সের বহর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান।

বালোচিস্তান ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি
তুরবাতের এই হামলার পিছনে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির হাত রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে আসছে। পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশ বহুদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র। বালোচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানো তাদের একটি সাধারণ কৌশল।

পুলওয়ামার মতো, বালোচিস্তানেও বিদ্রোহীরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে বারবার টার্গেট করছে। তবে তুরবাতের এই হামলার পিছনে ঠিক কারা রয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

পুলওয়ামা ও তুরবাত: মিল ও অমিল
পুলওয়ামার হামলায় ভারতের কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভূমিকা ছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। সেখানে একটি আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছিল, যা অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক ছিল। তুরবাতের ক্ষেত্রে একটি রিমোট-চালিত বোমার মাধ্যমে বাসটিকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

দুটি ঘটনাতেই সেনাবাহিনী ছিল লক্ষ্যবস্তু। পুলওয়ামায় জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে আঘাত করা, এবং তুরবাতের ঘটনা সম্ভবত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের একটি পরিকল্পিত হামলা।

সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
পুলওয়ামার ঘটনার পর ভারত কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল। তুরবাতের ঘটনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখনও দোষীদের চিহ্নিত করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দোষীদের খুঁজে বের করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে তদন্ত চলছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “এই ঘটনা আমাদের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে বড় আঘাত। দোষীদের দ্রুত ধরা হবে।”

সাম্প্রতিক বিদ্রোহী কার্যকলাপ
বালোচিস্তানের তুরবাত অঞ্চল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার নিরাপত্তা বাহিনীর টার্গেট হয়েছে। বিদ্রোহীরা সেখানে তেল এবং গ্যাস স্থাপনাসহ সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রকাশ করে। তুরবাতের হামলা সেই সমস্যাকেই আরও স্পষ্ট করে তুলল।

উদ্বিগ্ন জনমত
পুলওয়ামার মতো ঘটনা ভারতের মানুষকে যেমন ব্যথিত করেছিল, তুরবাতের হামলা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যেও একই ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, “আমাদের জীবন প্রতিদিন ঝুঁকির মুখে। এমন হামলা কবে থামবে, আমরা জানি না।”

তুরবাতের ঘটনা প্রমাণ করে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিদ্রোহী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যদি এই ধরনের হামলার সমাধান না করা যায়, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।