মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন যে, তার প্রশাসন ভারতকে F-35 স্টিলথ ফাইটার জেট সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তান এই ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সতর্ক করেছে যে, এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করতে পারে এবং কৌশলগত স্থিতিশীলতাকেও দুর্বল করতে পারে।
পাকিস্তান বিদেশ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “পাকিস্তান ভারতকে আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহের পরিকল্পনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই ধরনের পদক্ষেপ অঞ্চলটির সামরিক ভারসাম্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে এবং কৌশলগত স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করে।” তিনি আরো বলেন, “এগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে অপ্রয়োজনীয়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি যেন তারা একটি সুষম এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে এবং এমন অবস্থান গ্রহণ থেকে বিরত থাকে যা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহযোগিতা
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার সময় বলেছেন, “আমরা এই বছর থেকে ভারতকে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি, এবং পরবর্তীতে ভারতকে F-35 স্টিলথ ফাইটার জেট সরবরাহের পথে আমরা কাজ করছি।” যদিও ভারত সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেনি, ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি স্পষ্ট করেছেন যে, এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি।
পাকিস্তানের উদ্বেগের মধ্যে, ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে F-35 সংগ্রহের প্রক্রিয়া এখনও প্রস্তাবের পর্যায়েই রয়েছে এবং এই ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। তবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও গভীর হচ্ছে। উভয় দেশ একসঙ্গে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সামুদ্রিক সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একত্রিত হওয়া অন্তর্ভুক্ত।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে আকাশ, স্থল, সমুদ্র, মহাকাশ এবং সাইবারস্পেসে যৌথ প্রশিক্ষণ, সামরিক মহড়া এবং অপারেশনাল সমন্বয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া লজিস্টিকস, গোপনীয় তথ্য বিনিময় এবং বাহিনী চলাচল সহজ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলো “ইউএস-ইন্ডিয়া কমপ্যাক্ট ফর দ্য ২১শতাব্দী” নামে একটি নতুন চুক্তির আওতায় থাকবে, যা দুই দেশের সামরিক, বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
তহব্বুর রানা’র ভারতকে প্রত্যর্পণ
এছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তহব্বুর রানা’র ভারত প্রত্যর্পণ সম্পর্কেও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, আমার প্রশাসন মুম্বাই হামলার এক দায়ী ব্যক্তিকে ভারতের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তহব্বুর রানা, যিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক ব্যবসায়ী, ২৬/১১ মুম্বাই হামলায় জড়িত থাকার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তার সহযোগী, ডেভিড হেডলি, অপরাধ স্বীকার করে পরে রানার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের জন্য এইসব ঘটনা বিশেষ গুরুত্বের সাথে আসছে, কারণ ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। F-35 যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সামরিক সহযোগিতা পাকিস্তানের জন্য নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, বিশেষত যখন তারা মনে করছে যে এসব পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যকে অস্থিতিশীল করতে পারে।