শান্তি-নিরাপত্তায় সেরা রেকর্ড দাবি চীনের, ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে কড়া জবাব

স্পেনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য আলোচনার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কঠোর অবস্থানের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাল চীন। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, বেইজিং যদি রাশিয়ার…

Trump-China

স্পেনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য আলোচনার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কঠোর অবস্থানের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাল চীন। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, বেইজিং যদি রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনা চালিয়ে যায়, তবে তার দেশ চীনের ওপর ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবে। এর উত্তরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই শান্তি, নিরাপত্তা ও সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন—“যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না, বরং নিষেধাজ্ঞা বিষয়টিকে আরও জটিল করে তোলে।”

চীনের বক্তব্য: যুদ্ধ নয়, শান্তির পক্ষে:
স্লোভেনিয়া সফরে ওয়াং ই স্পষ্ট করে জানান, চীন কখনো যুদ্ধ শুরু করে না এবং যুদ্ধের পরিকল্পনাও করে না। বরং চীন সর্বদা শান্তি আলোচনা ও রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষপাতী। তিনি বলেন, “চীন একটি দায়িত্বশীল বড় দেশ এবং শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সবচেয়ে ভালো রেকর্ডধারী। আমাদের ভূমিকা সবসময়ই সংলাপকে উৎসাহিত করা এবং সংকটের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা।”

   

ট্রাম্পের দাবি ও হুঁশিয়ারি:
গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানান, যেন তারা অবিলম্বে চীনের ওপর ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এবং রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে। তার মতে, এভাবেই ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।
ট্রাম্প লিখেছেন, “চীনের ওপর এসব শক্তিশালী শুল্ক রাশিয়ার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দেবে। ইউক্রেন যুদ্ধ আমার লড়াই নয়; এটি বাইডেন এবং জেলেনস্কির যুদ্ধ। আমি কেবল এটি থামাতে চাই, যাতে হাজার হাজার রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রাণ বাঁচানো যায়।”

ভারতকেও আঘাত:
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।

চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ:
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ নতুন নয়। এর আগে ওয়াশিংটন চীনা আমদানির ওপর অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ কর আরোপ করেছিল। পাল্টা জবাবে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একসময় ট্রাম্প চীনা আমদানির ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। যদিও দীর্ঘ আলোচনার পর এ বছরের মে মাসে দুই দেশ সমঝোতায় পৌঁছে সেই ‘টিট-ফর-ট্যাট’ বা পাল্টা শুল্কযুদ্ধ বন্ধ করে।

Advertisements

নতুন অচলাবস্থার শঙ্কা:
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, স্পেনে হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর আগে ট্রাম্পের এমন হুমকি সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। বিশেষত যখন ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ন্যাটো দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়েন চরমে পৌঁছেছে, তখন চীনের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করলে বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

চীনের কৌশল: সংলাপ বনাম চাপ:
ওয়াং ই-এর বক্তব্যে চীনের মূল বার্তাই স্পষ্ট—তারা কোনো ধরনের সামরিক সংঘাতে জড়াতে চায় না এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে কার্যকর সমাধান মনে করে না। বরং চীন আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পক্ষে। বেইজিং মনে করে, অতিরিক্ত শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা শুধু বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যা বৈশ্বিক বাজারে আরও অস্থিরতা ডেকে আনবে।

শেষ কথা:
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক হুমকি ও চীনের শান্তি বার্তা দুই ভিন্ন ধারা তৈরি করেছে। একদিকে ট্রাম্প মনে করছেন কঠোর অর্থনৈতিক চাপই রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা ভাঙার একমাত্র উপায়, অন্যদিকে চীন বিশ্বাস করে যে যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আসন্ন স্পেনের বাণিজ্য বৈঠকে এই দ্বন্দ্ব কিভাবে মিটবে, তাই এখন আন্তর্জাতিক মহলের নজর।