বাংলাদেশ তৈরির পর পরীমণি প্রথম চলচ্চিত্র অভিনেত্রী যিনি মাদক মামলায় জেল খেটেছেন। দুই বাংলার চলচ্চিত্র মহলে জনপ্রিয় শামসুন্নাহার স্মৃতি পরীমণি এবার খুনের চেষ্টা মামলায় জড়িয়েছেন। সেই মামলায় জেরার মুখোমুখি তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে করা মারধর ও ধর্ষণচেষ্টা মামলায় জেরার মুখোমুখি হতে ঢাকার আদালতে চিত্রনায়িকা পরীমণিক আসামিপক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করবেন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল – ৯ এ হাজির হন তিনি।
২০২১ সালে পরীমনি ঢাকার বোট ক্লাবে হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন তিনি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমিসহ চারজনকে আসামি করে ঢাকার সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন পরীমনি। উল্লেখ্য ওই ব্যবসায়ী রাজনৈতিক প্রভাবশালী। তিনি বাংলাদেশের পূর্বতন শাসকদল জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা।
পরীমণির মামলার পরই উত্তরার এক বাসা থেকে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর মাদক মামলায় জেলে গেছিলেন পরীমণি। তখন বাংলাদেশে ছিল শেখ হাসিনার জমানায়।
নাসির উদ্দিনের অভিযোগ পরীমণি ও তার সহযোগীরা মদ্যপানে অভ্যস্ত। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামীদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে হয়রানির ভয় দেখান। ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর পরীমণিসহ বাকিরা ঢাকার বোটক্লাবে মদ্যপ অবস্থায় খুনের চেষ্টা করেন। তবে পরীমণির তরফে ধর্ষণ চেষ্টার যে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তার প্রমাণ মেলেনি বলে তদন্ত রিপোর্টে এসেছে।
ঢাকা বোটক্লাবের বিতর্কিত ঘটনার পরপরই পরীমণির বিরুদ্ধে মাদক রাখার অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট তার বনানীর ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি মদ, মদের বোতলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরীমণিকে জেলে যেতে হয়েছিল। ৩১ আগস্ট জামিন পান পরীমণি। জামিন পেয়ে ১ সেপ্টেম্বর কারামুক্ত হন তিনি।
জামিনে মুক্ত পরীমণি এরপর সন্তানসম্ভবা বলে নিজেকে দাবি করেন। তিনি বিয়ে করেন অভিনেতা শরিফুল রাজকে। সন্তান জন্মের পর পরী-রাজের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সেই বিয়ে ভেঙে গেছে। একাধিক বিয়ে, সম্পর্ক বিচ্ছেদ, বিতর্কিত মাদক মামলা সব মিলে অভিনেত্রী পরীমণীর জীবনটাই যেন সিনেমা।
বাংলাদেশে গতবছর গণবিদ্রোহে হাসিনা জমানার পতন হয়েছে। এরপর পরীমণি একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে ইসলামি সংগঠনগুলির বাধাপ্রাপ্ত হন। ক্ষোভে তিনি লিখেছিলেন, “এতো চুপ করে থাকা যায় নাকি!!! পরাধীন মনে হচ্ছে। শিল্পীদের এতো বাধা কেন আসবে!? Insecure feel হচ্ছে ! এমন স্বাধীন দেশে নিরাপদ নই কেন আমরা!” এই পোস্ট করার পর পরীমণির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজনীতিক-ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে করা একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তিনি জামিন পান। অভিযোগ, পরীমণি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ইসলামি মৌলবাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তাকে আইনি জটিলতায় হয়রান করা হচ্ছে।
পরীমণি, বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তাঁর কিছু আলোচিত বিতর্কের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
1. নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (২০২১): পরীমণি একটি প্রেস কনফারেন্সে অভিযোগ করেন যে তাকে ঢাকার একটি ক্লাবে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তাঁর সঙ্গীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।
2. মাদক মামলায় গ্রেপ্তার (২০২১): র্যাব একটি অভিযানে পরীমণির বাসা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তিনি কয়েকদিন রিমান্ডে ছিলেন এবং এই মামলাটি নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
3. ব্যক্তিগত জীবন ও বিবাহ সংক্রান্ত আলোচনা: পরীমণির একাধিক বিয়ে, বিচ্ছেদ এবং সম্পর্ক নিয়েও গণমাধ্যমে নানা আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে শরিফুল রাজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, সন্তান জন্ম ও পরে সম্পর্কের টানাপোড়েন বেশ আলোচিত ছিল।
4. সামাজিক মাধ্যমে সরব উপস্থিতি: পরীমণি প্রায়ই সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন খোলামেলা বক্তব্য বা ছবি পোস্ট করে আলোচনায় আসেন। অনেকেই একে সাহসী বললেও, অনেকে সমালোচনা করেছেন।