ইউনুসের ইউ-টার্ন! ভারতের ভয়ে জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফর স্থগিত

Zakir Naik Bangladesh Visit Postponed

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে—ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিতর্কিত ইসলামী প্রচারক জাকির নায়েককে (Zakir Naik) অস্থায়ীভাবে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার গৃহমন্ত্রণালয়ে ল অ্যান্ড অর্ডার কোর কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গৃহমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি স্থানীয় সংগঠন ২৮ এবং ২৯ নভেম্বর ঢাকায় দুই দিনের একটা বড় ইভেন্টে জাকির নায়েককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, এবং তিনি দেশের বিভিন্ন অংশে ঘুরে বক্তৃতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

Advertisements

কিন্তু এই সম্ভাব্য সফর নিয়ে সমাজের একটা বড় অংশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া উঠেছিল, এবং কয়েকদিন ধরে এটা পর্যালোচনায় ছিল। মিটিংয়ে কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, জাকির নায়েকের উপস্থিতিতে বিশাল জনসমাগম হবে, যার জন্য প্রচুর পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য লাগবে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যেই শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যস্ত। তাই তার সফর শুধু নির্বাচনের পরই বিবেচনা করা যাবে।

   

খবরে জানা গেছে, মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথমে জাকির নায়েকের এক মাসের সফর অনুমোদন করেছিল, যা ২৮ নভেম্বর শুরু হয়ে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলার কথা ছিল। এই সময়ে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তার সাধারণ বক্তৃতা দেবেন, যেগুলো সমালোচকরা বিভাজনকারী এবং উস্কানিমূলক বলে বর্ণনা করেন। কিন্তু নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে সরকার হঠাৎ ইউ-টার্ন নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারণ হলো নির্বাচনকালীন সময়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর চাপ। বাংলাদেশে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা, এবং সরকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়। জাকির নায়েকের মতো বিতর্কিত ব্যক্তির আগমনে যদি বড় ধরনের জনসমাগম হয়, তাহলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

জাকির নায়েকের ব্যাকগ্রাউন্ডও এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করা একজন ইসলামী প্রচারক, যিনি ২০১৬ সালের ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারি হামলার সাথে পরোক্ষভাবে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতে তার বিরুদ্ধে হেট স্পিচ, মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদের প্রচারের অভিযোগে মামলা চলছে, এবং তিনি ২০১৬ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন। শেখ হাসিনার সরকার তার পিস টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে ব্যান করেছিল। ইউনুস সরকারের প্রথম অনুমোদনের পর সমাজের একটা বড় অংশ, বিশেষ করে সেক্যুলার গ্রুপ এবং ভারতের সাথে সম্পর্কিত মহল, তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। এমনকি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার এক্সট্রাডিশনের দাবি জানিয়েছিল। এই চাপ এবং নিরাপত্তার কারণে সরকার পিছু হটেছে।

Advertisements

স্থানীয় সংগঠন স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফেসবুকে ঘোষণা করেছিল যে সরকারি অনুমতি পাওয়া গেছে, কিন্তু এখন সেটা স্থগিত। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন আলোচনা শুরু করেছে। কেউ বলছেন, এটা ভারতের চাপের ফল, অন্যরা বলছেন এটা নিরাপত্তার প্রশ্ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় #ZakirNaik এবং #BangladeshElection ট্রেন্ড করছে, যেখানে লোকেরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। একজন বলেছেন, “নির্বাচনের আগে এমন বিতর্ক এড়ানো উচিত।” অন্যরা বলছেন, “ইউনুস সরকারের সাহসী সিদ্ধান্ত।”

এই স্থগিতাদেশ জাকির নায়েকের ভক্তদের জন্য হতাশাজনক, কিন্তু সরকারের জন্য এটা একটা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। নির্বাচনের পর যদি পরিস্থিতি শান্ত হয়, তাহলে হয়তো তার সফর পুনর্বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এখনকার মতো এটা স্থগিত। এই ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলবে, কারণ ভারত জাকির নায়েককে একজন ফেরারি অপরাধী হিসেবে দেখে। সার্বিকভাবে, এটা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা সময় বলবে।