হাসিনার দিল্লি-আশ্রয়েই সম্পর্কে টানাপড়েন: রাষ্ট্রসংঘে মন্তব্য ইউনুসের

রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনাকে আশ্রয়…

Yunus UN Sheikh Hasina India

রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ফলে দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি ও টানাপড়েন বাড়ছে।

ইউনুস বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের এখন সমস্যা রয়েছে। কারণ, তারা ছাত্র আন্দোলন পছন্দ করেনি। অথচ সেই আন্দোলনই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। ভারত এখন তাঁকে আশ্রয় দিচ্ছে—যিনি দেশের ভেতরে বিভাজন তৈরি করেছিলেন এবং তরুণদের ওপর দমন চালিয়েছিলেন। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে।”

   

ছাত্র আন্দোলন, ভুয়ো প্রচার ও পালিয়ে যাওয়া হাসিনা

৫ অগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ছাত্র আন্দোলনের জোয়ারে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। সেদিনই তিনি ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। এর পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ইউনুস ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, আগামী বছরই নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে এই আন্দোলনকে ঘিরে ভুয়ো খবর ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্যে, “অন্য দিক থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এ এক ইসলামি আন্দোলন, তালিবানরা বাংলাদেশ দখল করেছে। আমাকে পর্যন্ত তালিবান বলা হচ্ছে। অথচ বাস্তবে এটি নিছক ছাত্রদের গণআন্দোলন।”

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট: সার্ক পুনরুজ্জীবনের ডাক Yunus UN Sheikh Hasina India

ইউনুস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ককে “ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্য” বলে বর্ণনা করেন এবং প্রায় এক দশক ধরে অকার্যকর থাকা এই আঞ্চলিক মঞ্চকে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির ভবিষ্যৎ স্থিতি ও উন্নতি নির্ভর করছে সহযোগিতার পুনর্নির্মাণের ওপর।

ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান

তবে ভারতের অবস্থান এখানে স্পষ্ট। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংককে বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুহাম্মদ ইউনুসের বৈঠকে নয়াদিল্লি একাধিক উদ্বেগ প্রকাশ করে।

Advertisements

প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর গুরুত্বের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ জানান।

তিনি প্রত্যাশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার নৃশংসতার ঘটনাগুলি তদন্ত করবে এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করেছিলেন, “যে কোনও মন্তব্য বা পদক্ষেপ যা পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে, তা এড়ানোই বাঞ্ছনীয়।”

আগামী দিনের প্রশ্ন

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর শেখ হাসিনার ভারত-নির্ভর আশ্রয় এবং ইউনুস সরকারের সরাসরি অভিযোগ দুই দেশের সম্পর্কে নতুন রাজনৈতিক চাপ তৈরি করেছে। রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চে উচ্চারিত এই সুর শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমীকরণেও নতুন বিতর্ক উস্কে দিল। আগামী নির্বাচনের আগে এই টানাপড়েন কী পথে গড়াবে, সেদিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News