পাক জেনারেলকে দেওয়া বাংলাদেশের মানচিত্রে ভারতের উত্তর–পূর্ব! বিতর্কে ইউনূস

Yunus Greater Bangladesh Map

ঢাকা: ফের কূটনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধান মহম্মদ ইউনূস৷ পাকিস্তানের সেনা কর্তাকে তিনি এমন এক বই উপহার দিলেন, যার প্রচ্ছদে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে।

Advertisements

বিতর্কিত মানচিত্র

ঘটনাটি সপ্তাহান্তের৷ পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শমশাদ মির্জা ঢাকা সফরে যান এবং ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই বৈঠকের কিছু ছবি ইউনূস নিজেই ‘এক্স’-এ  পোস্ট করেন। তাতে দেখা যায়, ইউনূস মির্জাকে উপহার দিচ্ছেন তাঁর লেখা বই ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’৷ যার মলাটে রয়েছে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর বিতর্কিত মানচিত্র৷ যেখানে ভারতের আসাম-সহ সাতটি উত্তর–পূর্ব রাজ্যকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ‘অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ’-এর অভিযোগ উঠছে ইউনূসের বিরুদ্ধে। যদিও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ঢাকা–ইসলামাবাদ সখ্য ও উত্তর–পূর্বের প্রসঙ্গ Yunus Greater Bangladesh Map

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দুই দেশের সম্পর্কে যে তিক্ততা ছিল, তা এখন কিছুটা প্রশমিত।

তবে ভারতের ক্ষেত্রে ইউনূসের অবস্থান বারবার প্রশ্ন তুলছে কূটনৈতিক মহলে। এর আগেও তিনি একাধিকবার ভারতের উত্তর–পূর্ব অঞ্চলকে ‘ল্যান্ডলকড’ বলে উল্লেখ করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। গত এপ্রিল মাসে চিন সফরে গিয়ে ইউনূস দাবি করেন, “বাংলাদেশই এই অঞ্চলের একমাত্র ‘ওশান গার্ডিয়ান’, কারণ ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের সমুদ্রপথে কোনও প্রবেশাধিকার নেই।” তিনি আরও বলেন, “এ অঞ্চলে চিনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে এবং বাংলাদেশ সেই সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।”

Advertisements

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক অস্বস্তি

ইউনূসের সেই মন্তব্যের পরই নয়াদিল্লি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে দেন, ভারতের উত্তর–পূর্ব কেবল ভৌগোলিক নয়, কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— বিশেষত বিমস্টেক অঞ্চলের সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। এর পর ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিল করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে পৌঁছত।

এর পর আরও বিতর্ক তৈরি হয় মে মাসে, যখন ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান দাবি করেন, “ভারত যদি পাকিস্তানে হামলা চালায়, তবে বাংলাদেশকে চিনের সঙ্গে যৌথভাবে ভারতের উত্তর–পূর্ব দখল করার পরিকল্পনা করা উচিত।” এই মন্তব্যের পর কূটনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হয়।

তাছাড়া ২০২৪ সালেই ইউনূসের আরেক ঘনিষ্ঠ, নাহিদুল ইসলাম, ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ নামের একটি মানচিত্র শেয়ার করেন, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের অংশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়।

বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মহম্মদ ইউনূসের এই পুনঃপুন উস্কানি কেবল সীমান্ত–রাজনীতি নয়, বরং বৃহত্তর আঞ্চলিক শক্তি–সমীকরণের ইঙ্গিতবাহী। পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সখ্যের পটভূমিতে ইউনূস হয়তো এক নতুন ভূ–কৌশলগত অক্ষ গঠনের সংকেত দিচ্ছেন— যা ভারতের উত্তর–পূর্বকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।