হাফ প্যান্ট পরে খেলায় বাংলাদেশে কিশোরী ফুটবলারদের মারধর, কুপিয়ে খুনের হুমকি

আক্রান্ত একাধিক কিশোরী ফুটবলার। প্রকাশ্যে মারধর ও অশালীন ইঙ্গিতের পাশাপাশি তাদের কুপিয়ে খুনের হুমকি দিয়েছে কয়েকজন। কিশোরী ফুটবলারদের আক্রান্তের ঘটনায় বাংলাদেশে (Bangladesh) বিতর্ক প্রবল। অভিযোগ…

আক্রান্ত একাধিক কিশোরী ফুটবলার। প্রকাশ্যে মারধর ও অশালীন ইঙ্গিতের পাশাপাশি তাদের কুপিয়ে খুনের হুমকি দিয়েছে কয়েকজন। কিশোরী ফুটবলারদের আক্রান্তের ঘটনায় বাংলাদেশে (Bangladesh) বিতর্ক প্রবল।

অভিযোগ হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলায় খুলনা জেলার অনূর্ধ্ব ১৭ দলের ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা হয়। স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে’ অনুশীলন করেন এই কিশোরী ফুটবলাররা। অভিযোগ, প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। শনিবার স্থানীয়দের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় কিশোরী দলের ক্যাপ্টেন সাদিয়া হামলার শিকার হয়েছেন। আহত অবস্থায় তাকে বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে আত্মীয়রা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নুরুল আলম নামে এক যুবককে আটক করেছে।

   

সাদিয় বলেন, গত বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলন করার সময় নুপুর খাতুন নামের একটি মেয়ে আমার ছবি তুলে নেয়। পরে বাড়িতে বাবা-মাকে দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে মন্তব্য করে। শনিবার বিকেলে তার কাছে আমি বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে সে অকথ্য ভাষায় আমাকে গালি গালাজ করতে থাকে। আমি এর প্রতিবাদ করলে সে আমাকে কিল, চড়, ঘুষি মেরে মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে জখম করে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা ও আমার ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তকাসহ অন্য খেলোয়াড়দের জানাই। তারা আমাকে সঙ্গে নিয়ে নুপুর খাতুনদের বাড়িতে যান। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বাড়ির আলাউদ্দীন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা বেগম মিলে আমাদের ওপর হামলা চালান। এতে আমার বান্ধবী মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মন্ডল আহত হয়। তারা লোহার রড দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেয়।’

আহত ফুটবলার মঙ্গলী বাগচী বলেন, ‘তারা আমাকে আহত করে প্রায় দুই ঘন্টা হাত বেঁধে আটকে রেখেছিল। তখন আমি অজ্ঞান ছিলাম। জ্ঞান ফিরলে দেখি চেয়ারের সঙ্গে আমার হাত বাঁধা। রক্তে আমার গা ভিজে গেছে। জ্ঞান ফিরলে হামলাকারীরা হুমকি দেয়- মেয়ে মানুষ হয়ে হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেললে গ্রাম থেকে বের করে দিবো। তারপর আর এই এলাকায় আসা যাবে না। পরে স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।’ তিনি বলেন, তবে আমি খেলা ছেড়ে দিব না। যতই বাধা আসুক ফুটবলের সঙ্গে থাকবো।’

Advertisements

মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী বলেন, ‘শুধু ফুটবল খেলা নিয়ে আমাদের মেয়েদের নানা কটূক্তির শিকার হতে হয়। তাই অতীতে মেয়েদের নানাভাবে বুঝিয়েছি ফুটবল থেকে বেরিয়ে আসতে। এবার তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হল। মেয়েদের বলেছি- ফুটবল ছেড়ে দাও। কিন্তু তারা তো নাছোড় বান্দা, ফুটবল খেলবেই।’

অভিযুক্ত নুপুর জানান, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়ছে তা মিথ্যা ছবি তোলা নিয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সাদিয়া সহ আরও সাত আটজন আমাদের বাড়ি এসে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের পরিবারের সকল কে তারা মারধর করে।

সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক দেবাশীষ কুমার মন্ডল বলেন, ‘প্রাইমারি স্কুলে থাকার সময় থেকে তারা আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বঙ্গমাতা ফুটবল টিমের খেলোয়াড় ছিলেন এরা। তাদের ভালো খেলোয়াড় বানানোর জন্য এখানে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব রয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকেই চান না মেয়েরা ফুটবল খেলুক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা জরুরি।’

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News