বাংলাদেশের (Bangladesh) আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON) অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সরকারি আইনজীবীকে খুন করেছে। এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামে। বিবিসি’র খবর, স্থানীয় আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ধৃত চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর জামিনের আবেদন নাকচ হতেই তার ভক্ত ও ইসকন অনুসারীরা হামলা শুরু করেন। এক পর্যায়ে সরকারি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে খুন করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আশঙ্কায় চট্টগ্রামে তীব্র আতঙ্ক।
ইসকনের তরফে রাষ্ট্রদ্রোহে ধৃত চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ওরফে চিন্ময় প্রভুর মুক্তি চাওয়া হয়েছে। আর এই সংগঠনটির অনুসারীদের সশস্ত্র সদস্যদের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে বিগত শেখ হাসিনার শাসনামলে জামাত ইসলামি সংগঠনকে নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। রক্তাক্ত গণবিক্ষোভে গত ৫ আগস্ট হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর জামাত ইসলামির নিষেধাজ্ঞা বিলোপ হয়েছে। এই ইসলামি সংগঠনটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তথা পাক শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন হবার সশস্ত্র সংগ্রামের বিরোধিতা করার অভিযোগ প্রমাণিত।
এবার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দু-বৈষ্ণব সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে বিতর্ক বাড়ছে। বাংলাদেশের ইসকন শাখার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, এই সংগঠনের সদস্যরা গোপনে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভাতৃপ্রতীম শাখার সঙ্গে সংযোগ করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ছড়াতে চাইছে। তবে ইসকন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইসকনের কাজ কী? বাংলাদেশে এই সংগঠনের হাল হকিকত:
ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) অর্থাৎ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের যাত্রা শুরু হয় ৫৮ বছর আগে। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তার নেতৃত্বে ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই ইসকন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ইসকন মূলত বৈষ্ণব ধর্মের একটি অংশ। শ্রী কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশ্বজুডে কৃষ্ণ তত্ত্ব ও বৈষ্ণবীয় সংস্কৃতি প্রচার করে ইসকন।
ইসকন বাংলাদেশ শাখার ওয়েবসাইট “ইসকনবিডি” সে দেশে তাদের সংগঠনের কবে থেকে কার্যক্রম শুরু সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করেনি। তবে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, সংযুক্ত পাকিস্তান আমলেই ১৯৭০ সাল নাগাদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা) প্রদেশে ইসকন তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ তৈরি হয়। এরপর বাংলাদেশের সবকটি বিভাগে ইসকনের শাখা স্থাপিত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের শাখা সবথেকে আলোচিত। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসকন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ইসকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি নেতৃত্বে স্বার্থে আন্তঃসংঘাতের অভিযোগ উঠেছে। তবে সমালোচনা এবং বিতর্ক সত্ত্বেও ইসকন অনেক দেশে তাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক কাজের জন্য সমাদৃত এবং প্রশংসিত। বিশেষত তাদের বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি (ফুড ফর লাইফ) বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত।