বাংলাদেশ (Bangladesh) জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থবার সরকার গড়ে বিশ্বে নজির গড়েছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। কোনও মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কুড়ি বছর কুর্সিতে থাকা একটি নজির। তবে সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়নি বলে মন্তব্য করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সব দল ভোটে অংশ নেয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘ।
নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২৪টি জয়ী আওয়ামী লীগ। বিরোধী নির্দলরা পেয়েছে ৬০টি। আর জাতীয় পার্টি ১১টি। অন্যান্যরা ৩টি। ভোট পড়েছে ৪১.৮ শতাংশ। অর্থাত ৫০ শতাংশের কম ভোটে পুনরায় সরকার গড়েছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এক বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ করেছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছ বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেফতার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে আমেরিকা সরকার উদ্বিগ্ন। আমরা অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।
নির্বাচনচলাকালীন সময়ে এবং এর আগের মাসগুলোতে যেসব হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তার নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এসব হিংসার গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। সব দলের প্রতি হিংসা পরিহার করারও আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করা, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাষ্ট্রসংঘ উল্লেখ করেছে গণগ্রেপ্তার, হুমকি, গুম, ব্ল্যাকমেইল এবং নজরদারি সবই আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা ভোটের আগে ব্যবহার করেছিলেন, যা প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বয়কট করেছিল। বিরোধী দলগুলির দ্বারা সংঘটিত অগ্নিসংযোগসহ রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রসংঘ জানায়, গত অক্টোবর থেকে বিরোধী দলের প্রধান নেতাসহ প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী দলীয় সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত দুই মাসে অন্তত ১০ জন বিরোধী দলীয় সমর্থক হেফাজতে মারা গেছেন অথবা নিহত হয়েছেন, যা সম্ভাব্য নির্যাতন বা আটকের কঠোর পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কর্তৃক বর্জন করা ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩ টি আসনে জয়লাভ করেছে।বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ভারত ও অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বহুপাক্ষিক সংস্থার অনেক বিদেশী পর্যবেক্ষককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।