যুগলপ্রসাদরা সবসময় থাকেন। তাঁদের মতো মানুষরা বিভূতিভূষণের কলমে চিরন্তন হয়ে যান। ‘আরণ্যক’-এর সেই রহস্য-মানুষ যুগলপ্রসাদ,তার লক্ষ্য মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জঙ্গলকে সুন্দর করে সাজানো। জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সে বিভিন্ন ফুলের বীজ রোপন করত। নিজের খরচে বনসৃজন করা যুগলপ্রসাদ এতেই আনন্দ পেত। ঠিক তেমনই একজন বাংলাদেশের ওয়াহিদ সরদার।
গাছ আমাদের পরম বন্ধু। কিন্তু আমরা গাছের কতটা যত্ন নিয়ে থাকি ? গাছের যন্ত্রণার কথা কি কখনও ভেবেছি ? গাছের গায়ে লাগানো হচ্ছে পোস্টার-হোডিং।এইরকম গাছের যন্ত্রনা কমাতে রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। গোটা বাংলাদেশে গাছের গায়ে লেগে থাকা পেরেক তুলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এবার যশোরের এই ওয়াহিদ সরদারকে দেখা গেল পাখির জন্যে রাস্তার দুধারে ফলের গাছ লাগাতে। পেশায় এই নির্মাণ শ্রমিক নিজের খরচে এই কাজ করে চলেছেন। যা বেশ প্রশসংনীয়।
২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার পাওয়া ওয়াহিদ সরদারের এবারের মিশন বন্য পাখি ও পশুদের খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য ফলের গাছ রোপন। যশোরের রাজারহাট-মণিরামপুর-কেশবপুর হয়ে খুলনার চুকনগর পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার (বাজার বাদে) রাস্তার দুই পাশে পর্যায়ক্রমে তিনি এই গাছ লাগাবেন। তার মিশন শুরু হয়েছে ২০০ ফলের চারা দিয়ে। এসব ফলের গাছের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, আমড়া, জলপাই, কামরাঙা, তেঁতুল, জগডুমুর প্রভৃতি। শুধু রাস্তার ধরে নয়, সরকারি অফিস-আদালত প্রাঙ্গণে নিজের খরচ ও পরিশ্রমে গাছের চারা লাগিয়েছেন তিনি।
তাঁর দাবি, অনেকের ফলের বাগান রয়েছে। বাড়িতেও অনেকের ফলের গাছ রয়েছে। তবে সেসব গাছে পশুপাখি গেলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তারা খাবে কী? বাসা বাঁধবে কোথায়?’
তিনি আরও বলেন, বন্য পাখি ও পশুরাও এই প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় তাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অথচ তাদের খাদ্যের জন্য ভাবে খুব কম মানুষ। তাদের খাদ্যের জন্য উন্মুক্ত গাছের প্রয়োজন রয়েছে; যে গাছগুলোতে পাখিরা অবাধে বাসা বাঁধবে, বংশ বৃদ্ধি করবে। খিদে পেলে এই গাছ থেকে খাবারের চাহিদা মেটাবে; যে গাছের ফল খেলে কেউ তাদের তাড়া করবে না। পাশাপাশি এসব গাছ আমাদের অক্সিজেন দেবে। প্রকৃতির প্রতি ওয়াহিদ সরদারের এই ভালোবাসা দেশে মুগ্ধ গোটা বাংলাদেশ।