ঢাকা: বাংলাদেশ-়ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার জলবন্টন চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি মূলত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে। এরপর তিস্তা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, ভারতে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, বাংলাদেশে রক্তাক্ত গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইনে তিস্তার জলের দাবি ফের জোরালো হচ্ছে বাংলাদেশে। এরই মাঝে বাংলাদেশের অংশে তিস্তা প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ ঝুলি নিয়ে হাজির চিন।
ঢাকায় নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত ইঙ্গিত দিলেন বাংলাদেশে অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট টাউনশিপ তৈরি করার। চিনের তরফে জানানো হয়েছে, যেভাবে হোয়াংহো নদীর তীরে অত্যাধুনিক সুকিয়ান সিটি গড়ে তোলা হয়েছে, বাংলাদেশও তিস্তা তীরে তেমনই একটি শহর গড়ে তোলা হবে।
তিস্তা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলার অর্থনীতি। বাংলাদেশের নদী বিশে়ষজ্ঞরা বলেছেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মরশুমে জলের জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তিস্তা নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বাড়বে। বন্যায় ভাসবে না তিস্তাপারের জনপদ। সারা বছর নৌ চলাচলের মতো জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা যাবে।
তিস্তা প্রকল্পের অধীনে ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দু’পাড়ে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ, বালি সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার ও ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
তিস্তা প্রকল্পের নৌ-বন্দর এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় থানা, কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনীর জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পটিতে চিনের টেন্ডার। সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য তিস্তা জলবন্টন চুক্তির ইস্যুটি তিন দশকের বেশি পুরনো। বাংলাদেশের অংশে তিস্তা প্রকল্পে অংশ নিতে চায় ভারতও। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তীব্র হয়েছে ভারত বিরোধিতা। অন্তর্বর্তী সরকারের অভিযোগ, ভারত থেতে ক্রমাগত উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চান শেখ হাসিনা। ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংঘাত আবহে তিস্তা প্রকল্প রূপায়ণে বিপুল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বার্তা দিল চিন।
মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ, রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটন কেন্দ্র, ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুতকেন্দ্র, শিল্প-কারখানা, ইপিজেড, ইকোনমিক জোন, কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি উদ্ধার, বনায়ন ইত্যাদি রয়েছে।