Bangladesh: বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজের পটভূমিতে ঘটে চলা নানা ঘটনা এখন যেন এক বিস্ফোরক রহস্যে পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে যদি কোনো বড় উপন্যাস লেখা যেত বা চমৎকার কোনো ফিচার ফিল্ম তৈরি করা যেত, তাহলে তা দর্শকদের অবাক করে দিত। দেশটির গত দুই দশকের ইতিহাসে যা কিছু ঘটেছে, তাতে নিঃসন্দেহে একটি ভীতিকর সিরিজ নির্মাণের উপাদান রয়েছে। অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ, বিরোধী দলের প্রতিবাদ, সরকারি দলের পাল্টা আক্রমণ, এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতা—সব মিলিয়ে একটি গল্পের আখ্যান তৈরি করার মতো পরিস্থিতি।
তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশের সরকারের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনের বিস্ফোরক মন্তব্য। গত কিছু দিন ধরে তিনি বেশ কয়েকটি বেফাঁস কথাবার্তা বলেছেন, যা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অশান্তির জন্ম দিয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন একাধিকবার উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ পুলিশের কাছে ৭.৬২ ক্যালিবারের গুলি নেই, অথচ কিছু মৃত ছাত্রের শরীরে ওই গুলি পাওয়া গেছে। এই ঘটনাটি এখন রহস্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কেউ বলছে, এটি ছাত্রলীগের কাজ, কেউ আবার দাবি করছে যে, ইসলামী সন্ত্রাসীরা এর পেছনে রয়েছে।
এছাড়া, সাখাওয়াত হোসেন আরো কিছু তথ্য ফাঁস করেছেন, যেমন—সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের গ্রেফতার নিয়ে তিনি বলেছিলেন, পুলিশ তাদের গ্রেফতারের সময় একেবারেই সাজানো নাটক তৈরি করেছিল। তাদেরকে লুঙ্গি পরিয়ে, দাড়ি কামিয়ে, নৌকোয় চড়ানো হয়েছিল, যেন তারা দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে এবং পরবর্তী সময়ে জামিন অযোগ্য হয়ে যায়। এই ধরনের দাবি একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা, যা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
তবে এখানেই শেষ নয়, সাখাওয়াত হোসেন আরো একাধিক ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, অনেক কিছুই সত্য নয়, অথচ এসবই জনগণের কাছে সত্য বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনকি সরকার এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা জনগণকে দিনের পর দিন বোকা বানাচ্ছে। মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাখাওয়াতের দাবি, দেশের বিভিন্ন সরকারের আমলেই জনগণ প্রতারিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও জনগণকে বোকা বানাতে পিছপা হয়নি।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে, সাখাওয়াত আরও এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সংবাদমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের তথ্য প্রচারিত না হয়, সেই জন্য সাংবাদিকদের ছাঁটাই করে শাসক দলের অনুগতদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, সরকারের কর্মকাণ্ড এবং উপদেষ্টাদের কার্যকলাপ কখনোই সাধারণ মানুষের কাছে ফাঁস হতে দেয়া হবে না। গণমাধ্যমে তাদের পরিকল্পনা ও কাজের আসল চেহারা কখনোই দৃশ্যমান হবে না, এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে একটাই প্রশ্ন ওঠে, কীসের জন্য রাজনীতি চলছে? দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য কেউ কি এসে পৌঁছেছে ক্ষমতায়? সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বর্তমান পরিস্থিতি কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে না। দুর্নীতি এবং অসততা বেড়েই চলেছে, অথচ এসবের বিরুদ্ধে কোন দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। স্বাধীনতার নামে যে সংগ্রাম হয়েছিল, তার ফল কি আসলে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করেছে? স্বাধীনতার পর যে আশা এবং প্রত্যাশা ছিল, তা কি পূর্ণ হয়েছে?
প্রথম দিকে যে স্বাধীনতার ধারণা ও উদ্দেশ্য ছিল, তা ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, যেখানে সত্য এবং মিথ্যা, আস্থা এবং অবিশ্বাসের মধ্যে সীমাহীন বিভেদ তৈরি হয়েছে। জনগণ আর জানে না, তারা কি বিশ্বাস করবে এবং কি করবে না। একদিকে সরকার এবং তাদের বাহিনী, অন্যদিকে জনগণের প্রতি অঙ্গীকার—এই দুটির মধ্যে এক গভীর সংঘাত চলছে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে।