বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin) নতুন করে বিতর্ক উসকে দিলেন। শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি একটি পোস্ট করে দাবি করেন, শেখ হাসিনার প্রকৃত প্রতিশোধ নিতে হলে তাঁর তৈরি করা ৫৬০টি মডেল মসজিদ গুঁড়িয়ে দিতে হবে।
তসলিমার উস্কানিমূলক পোস্ট
শুক্রবার সকালে তসলিমা নাসরিন লেখেন, “ধার্মিকদের বশ করার বদ উদ্দেশ্য নিয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ বানিয়েছিলেন হাসিনা। হাসিনার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেসব ইমারত ধ্বংস করা হচ্ছে, সেসবের নির্মাতা হাসিনা নন। যদি বৈষম্যবিরোধী বিপ্লবী ছাত্রজনতা তাঁর নির্মিত ৫৬০টি মডেল মসজিদ আজ ভেঙে গুঁড়ো করে অথবা পুড়িয়ে ছাই করে—তাহলেই হাসিনার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে সত্যিকার প্রতিশোধ। তাই দেরি নয়, হাতুড়ি শাবল নিয়ে এগিয়ে চলুন।”
এই পোস্টের মাধ্যমে তিনি সরাসরি উগ্রপন্থীদের মসজিদ ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তসলিমার এই বক্তব্য মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে, যা নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় তোলে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা
বুধবার রাতে ঢাকায় সহিংস বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু ভবন ও শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন সুধা সদনে হামলা চালায়। মুজিবের বাড়ি হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু ভবন ধ্বংস করা হয়েছে, এবং সুধা সদনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে দুটি ভবনই পুরনো এবং শেখ হাসিনা নিজে এগুলো নির্মাণ করেননি। কিন্তু তবুও তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে এই স্থাপনাগুলোকেই টার্গেট করা হয়।
এই ঘটনার পর থেকেই তসলিমা নাসরিন বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৈরি মডেল মসজিদগুলোর ওপর আঘাত হানার আহ্বান জানিয়েছেন, যা দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সমালোচনার ঝড়
তসলিমার পোস্ট ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ তাঁর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে দেবে এবং দেশে আরও সহিংসতার জন্ম দেবে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু হতে পারে না। তসলিমা নাসরিন ক্রমাগত এমন মন্তব্য করে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছেন।”
অন্যদিকে, কেউ কেউ বলেছেন, তসলিমার এই বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলক এবং রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার অংশ। এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “তসলিমা নাসরিন সবসময় বিতর্ক তৈরি করতে চান। তিনি জানেন যে, এমন বক্তব্য দিলে প্রচার পাবেন, তাই ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করেছেন।”
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে, যেখানে সামান্য উসকানিও ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। তারা বলছেন, তসলিমার মতো ব্যক্তিত্বদের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত এবং এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “দেশে যখন সহিংসতা চলছে, তখন এ ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য আরও বড় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ধর্মীয় স্থাপনার ওপর হামলা হলে তা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নিতে পারে, যা কারও জন্যই ভালো হবে না।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তসলিমার এই পোস্ট নজরে এসেছে এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
একজন শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, “তসলিমা নাসরিনের মতো ব্যক্তিরা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চান। আমরা তাঁর পোস্ট পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজন হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সংকট নিরসনের আহ্বান
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। সহিংসতা ও উসকানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
এদিকে, সাধারণ জনগণও আতঙ্কে রয়েছে, কারণ রাজনৈতিক সহিংসতা ও উসকানির ফলে নতুন করে আরও সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। ধর্মীয় স্থাপনাগুলো নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করা উচিত নয় বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
তসলিমা নাসরিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে তাঁর উস্কানিমূলক বক্তব্য আরও উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই ইস্যুতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় এবং দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।