ভারতে হাসিনার প্রগতিশীল মুখ ভুল ধারণা, তিনি বাংলাদেশে ইসলামি দৈত্য ছেড়ে পালিয়েছেন

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের ধাক্কায় জীবন বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে এসেছেন (Sheikh Hasina) শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতাচ্যুত। বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আপাতত ভারত সরকারের কড়া নিরাপত্তায় আছেন। শেখ…

Taslima Nasreenn

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের ধাক্কায় জীবন বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে এসেছেন (Sheikh Hasina) শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতাচ্যুত। বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আপাতত ভারত সরকারের কড়া নিরাপত্তায় আছেন। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের মধ্যেই তাঁর সম্পর্কে বিস্ফোরক দাবি করলেন লেখিকা (Taslima Nasreenn) তসলিমা নাসরিন। তিনি যুক্তি ও তথ্য দিয়ে লিখেছেন বেশিরভাগ ভারতবাসী মনে করেন শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল। এটা ভুল ধারণা।

ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও যে কোনও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধী তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ইসলামি সংগঠনগুলোর প্রবল আন্দোলনের চাপের মুখে তিনি দেশত্যাগ করেন।

   

‘নির্বাসিত লেখিকা’ তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান ও পটপরিবর্তনের বিষয়ে ক্রমাগত শেখ হাসিনাকে দায়ী করছেন। তিনি লিখেছেন, “ভারতের অধিকাংশ লোক মনে করে হাসিনা খুবই প্রগতিশীল, তিনি ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে জোর লড়াই করছেন, যেহেতু কিছু যুদ্ধাপরাধীকে, যারা ছিল ইসলামি মৌলবাদি, ফাঁসি দিয়েছিলেন এবং গুলশাবের হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে বাংলাদেশি জিহাদিরা বিদেশি অতিথিদের নৃশংসভাবে হত্যা করার পর তিনি বেশি কিছু জিহাদিকে খুন করে দুনিয়াকে দেখিয়েছিলেন যে তিনি জিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। সে কারণে ইসলামি মৌলবাদ বিরোধী লোকেরা তাঁকে বাহবা দেয়। “

তসলিমা নাসরিনের যুক্তি, “ইসলামি মৌলবাদিরা যখন লালনের মূর্তি ভেঙ্গেছিল, হাসিনা চুপ ছিলেন। ওরা যখন হিন্দু মন্দিরের দুর্গা, কালী সরস্বতী মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলত, হাসিনা কিছু বলতেন না। ওরা যখন কুষ্টিয়ায় বাঘা যতীনের মূর্তি ভেঙ্গেছিল, হাসিনা কিছু বলেননি। ওরা যখন লেডি জাস্টিসের মূর্তি সুপ্রীম কোর্টের সামনে থেকে সরাতে বলেছিল, হাসিনা মাথা নত করে ওদের আদেশ মেনেছিলেন। দেশ জুড়ে হাসিনা তাঁর বাবার মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। গত দুদিন ধরে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলেছে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনকারীরা। চুপ করে থাকা ছাড়া তাঁর আর করার কিছু ছিল না।”

শেখ হাসিনার সঙ্গে ইসলামি মৌলবাদীদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, তিনি (শেখ হাসিনা) সংবিধানের রাষ্ট্র ধর্ম – ইসলামকে বিদেয় করেননি। তাঁর শাসনামলে অমুসলিমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে নিগৃহীত হয়েছে লাগাতার, তাঁর শাসনামলে একের পর এক মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী ব্লগাররা জিহাদিদের দ্বারা খুন হয়েছেন, হাসিনা তাঁদের পক্ষে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি তিনি বরং ব্লগারদের দোষ দিয়েছেন, খুন হওয়ার জন্য তাদেরই দায়ী করেছেন। রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক করার দরকার ছিল, হাসিনা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা সত্ত্বেও তা করেননি। বরং শত শত নারীবিদ্বেষী হিন্দুবিদ্বেষী ইহুদিবিদ্বেষী ধর্ম ব্যবসায়ীকে অনুমতি দিয়েছেন ওয়াজ মাহফিল করার, কিশোর তরুণদের মগজধোলাই করার।”

তসলিমা লিখেছেন “দেশকে তিনি (শেখ হাসিনা) মৌলবাদীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে গেলেন। ফ্রাংকেস্টাইনের মতো ইসলামি দৈত্য তৈরি করেছিলেন। ফ্রাংকেস্টাইনের তৈরি দৈত্য যেমন ফ্রাংকেন্সটাইনকে খেয়েছিল, হাসিনাকেও তার তৈরি দৈত্য খেল। খেল বলতে গদিচ্যুত করলো। হাসিনা পালিয়ে বেঁচেছেন। এখন দেশে যত প্রগতিশীল লোক আছে, তাদের চিবিয়ে খাবে এই দৈত্য।”

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হবার পর বাংলাদেশে নতুন সরকারের চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন তসলিমা। তিনি লিখেছেন, অনেকে বলছে দেশ চালাবে জামায়াতে ইসলামি। বাংলাদেশের এটাই হয়তো নিয়তি। দেশে ইসলামিকরণ চলেছে কয়েক যুগ ধরে। সবাই জামায়াতের রাজনীতি না করলেও জামায়াতি মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে, তারাই আজ দেশের সংখ্যাগুরু। নাস্তিক, মুক্তচিন্তক, যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা হাতে গোনা। হাসিনার দলের ভেতরেও আছে জামায়াতি মানসিকতা, দলের বাইরেও আছে জামায়াতি মানসিকতা। তাহলে দেশ চালাবে জামায়াতে ইসলামি, চালু করবে শরিয়া আইন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে, আমি মনে করি না, ধর্মনিরপেক্ষতা সহজে আসবে।”