বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের পৈতৃক ভিটেতে হামলা! সিরাজগঞ্জে কাছারিবাড়ি ঘিরে উত্তেজনা

ঢাকা: বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ‘কাছারিবাড়ি’-তে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রবিবার (৮ জুন) কিছু মানুষ এই ঐতিহাসিক…

Tagore House Vandalism

ঢাকা: বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ‘কাছারিবাড়ি’-তে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রবিবার (৮ জুন) কিছু মানুষ এই ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরিত বাড়িটিতে ঢুকে ভাঙচুর চালায়, অডিটোরিয়াম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এক পরিচালকের উপর শারীরিক হামলার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় আহত হন এক আধিকারিক।

বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপাতত দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ‘কাছারিবাড়ি’ প্রাঙ্গণ।

   

ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ জুন রবিবার দুপুরে এক পর্যটক পরিবার নিয়ে কাছারিবাড়িতে ঘুরতে যান। গেটকিপারদের সঙ্গে পার্কিং ফি সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁদের বচসা হয়। অভিযোগ, ওই পর্যটককে অফিসঘরে আটকে রেখে গার্ডরা মারধর করে।

এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদে সরব হন। সোমবার মানববন্ধনের আয়োজন হয়। এরপর মঙ্গলবার উত্তেজনা চরমে ওঠে। স্থানীয় একদল জনতা কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়ামে হামলা চালায়, ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং এক পরিচালকের উপর চড়াও হয়। ঘটনার সময় কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তা আহত হন বলে নিশ্চিত করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের অগ্রগতি Tagore House Vandalism

বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই ঘটনায় তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই কাছারিবাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যত বন্ধ থাকবে স্থানটি।”

কাছারিবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, “ঘটনা দুঃখজনক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাছারিবাড়ি বন্ধ থাকবে। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।”

Advertisements

কেন এত গুরুত্বপুর্ণ এই ‘কাছারিবাড়ি’?

শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক সম্পত্তির অংশ। জমিদারি দেখভাল করতে এসে এই বাড়িতেই দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন তিনি। এখানেই রচনা করেছিলেন ‘চোখের বালি’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘ঘরে বাইরে’ সহ বহু কালজয়ী সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতা, চিঠিপত্র, রোজনামচায় শাহজাদপুর ও কাছারিবাড়ির জীবন, প্রকৃতি, মানুষ উঠে এসেছে। তাই এই বাড়ি শুধু এক সাহিত্যিকের বাসস্থান নয়, এটি দুই বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের স্মারক।

সংস্কৃতি মহলের উদ্বেগ

এই হামলার ঘটনায় দুই বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সরকার বা সংস্কৃতি জগতের শীর্ষমহল থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। স্থানীয়দের একাংশ প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বাড়ানো হবে নজরদারি ও ট্যুরিস্ট ম্যানেজমেন্ট। কাছারিবাড়িকে হেরিটেজ সাইট হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি উঠেছে নতুন করে।