গণবিদ্রোহে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের (Bangladesh) স্বাধীনতার পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি (Sheikh Hasina) ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়েছেন গত ৫ আগস্ট। বাংলাদেশে শেষ হয়েছে টানা চার বার ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগের জমানা। এ দেশে এখন চলছে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বিদ্রোহী পড়ুয়াদের নিয়ন্ত্রিত অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনা দেশত্যাগী হবার পর উঠে এসেছে প্রায় ৫০০ কোটি আমেরিকান ডলার (৫৯ হাজার কোটি বাংলা টাকা) আত্মসাৎ করার বিস্ফোরক তথ্য। অভিযোগ, তিনি এই বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাৎ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। এই প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পরেই বাংলাদেশে তীব্র আলোড়ন। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর দেশের ২০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে। এটি পাবনা জেলার রূপপুরে অবস্থিত। ১৯৬১ সালে অবিভক্ত পাকিস্তান আমলে প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়ে বাংলাদেশ তৈরি হয়। ২০২১ সালে শেখ হাসিনা এই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, রাশিয়ার সরকার এই দুর্নীতিতে জড়িত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা , তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি তথা ব্রিটিশ সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় ওই টাকার লেনদেন হয়েছে। এতে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম।
অভিযোগ, ব্রিটেনের হেভিওয়েট রাজনীতিক টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর সাংসদ পদ ব্যবহার করে লেনদেনে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর দল লেবার পার্টি বর্তমানে ইংল্যান্ডের সরকারে আছে।
অভিযোগ, নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর মা শেখ রেহানা (শেখ হাসিনার বোন) ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প জানিয়েছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি।
রিপোর্ট বলা হয়, ২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের। অভিযোগ, এই কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা।