দেশহীন শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়ের এক বছর, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে?

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ঘর থেকে দূরে আরও এক ঘরে… নয়াদিল্লির পাল্ডারা রোডের সেই ফ্ল্যাটে যখন ছিলেন শেখ হাসিনা, তখনও তিনি দেশহীন নন তবে পিতৃহারা। বাংলাদেশের প্রথম…

Sheikh Hasina's Exile

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ঘর থেকে দূরে আরও এক ঘরে…

নয়াদিল্লির পাল্ডারা রোডের সেই ফ্ল্যাটে যখন ছিলেন শেখ হাসিনা, তখনও তিনি দেশহীন নন তবে পিতৃহারা। বাংলাদেশের প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হয়েছেন দেশটির ‘জাতির পিতা’ শেখ মুজিবুর রহমান। গত শতকের ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সময়টি ছিল মুজিব উত্তরাধিকারী দুই কন্যা হাসিনা ও রেহানার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কূটনৈতিক কৌশল। ছয় বছরের সেই ঠিকানা বারবার নিজের কথায় লিখেছেন শেখ হাসিনা। পরে প্রত্যাবর্তন ও বাংলাদেশের কিংবদন্তি-বিতর্কিত রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তার উত্থান। ভারত ঘনিষ্ঠতার সুবাদে শেখ হাসিনা পতন মুহূর্তে নয়াদিল্লি গমন ফের বেছে নিয়েছিলেন গতবছরের (২০২৪) ৫ আগস্ট। একবছর তিনি দিল্লি নিবাসী। তবে ঠিকানা অজানা (Sheikh Hasina’s Exile)!

   

পালাবদলের এক বছর- গণঅভ্যুত্থানের এক বছর

১৪৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসের (২০২৪, ৫ আগস্ট) সেই অশান্ত দুপুরে বাংলাদেশর জনগণ গুলি খেতে খেতে লাসে ঢেকে থাকা রাজপথ পেরিয়ে প্রবল আক্রোশে দখল করে নিলেন দেশটির ক্ষমতা কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রীর সরকারি আবাস ‘গণভবন’। ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা শেখ হাসিনা ও তার নিবিড় ছায়াসঙ্গী বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে একটি কপ্টার জ্বলতে থাকা, বিক্ষোভের ধোঁয়ায় ঢাকা মহানগরী ঢাকা থেকে চিলের মতো উড়ে চলেছিল। মাঝখানে কোথায় তার অবতরণ তা নিয়ে বিস্তর কূটনৈতিক লুকোছাপা আছে। তবে বাংলাদেশের আকাশ সীমা পার করে সেদেশের একটি সামরিক বিমানে শেখ হাসিনার দিল্লিতে পৌঁছে যান।

সেই থেকে দিল্লি প্রবাসী শেখ হাসিনা। ভারত সরকারের বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে থাকেন আর বাংলাদেশ ফের ক্ষমতা দখলের জন্য অডিও-ভিডিও বার্তা দেন। নিজ দেশে তিনি গণহত্যায় অভিযুক্ত। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধী’ হিসেবে তার বিচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বর্ধমান শহরের জামাইবাবু (দুলাভাই) মুহাম্মদ ইউনূস। এই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

হাসিনা জমানার পতন ও ইউনূস শাসনের এক বছর

নয়াদিল্লির লাজপত নগরের পান্ডারা রোডের ফ্ল্যাটে থাকাকালীন শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে তার দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপরই তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে গেছিলেন। বিপুল জনতা তাকে বরণ করেছিল। এরপর তার রাজনৈতিক উত্থান। বিরোধী নেত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর মাঝে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা থেকে বাঁচাকে তাকে ঘিরে মানবঢাল বিশ্বে নজিরবিহীন। আবার জনতার আক্রোশে তার দেশত্যাগ বিশ্ব জুড়ে চরম আলোচিত।

Advertisements

২০০৯ সাল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনগুলি ছিল প্রবল বিতর্কিত। সর্বশেষ নির্বাচনে (২০২৪) তিনশো আসনের মধ্যে ২২৪টি দখল করেছিলেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব জুড়ে এই নির্বাচন গণতন্ত্র বিরোধী বলে চিহ্নিত হয়। এর পরেই দেশটির সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণ নিয়ম সংস্কার (কোটা নিয়ম) চেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার ভূমিকায় জনতার ক্রোধ আগুনের গোলার মতো গড়াতে থাকে। বাংলাদেশের আকাশে তখন শ্রাবণ মাসের মেঘ গর্জন। রাজপথে বৃষ্টির মতো চলছে গুলি। রক্তাক্ত দেহ নিয়ে জনতার গর্জন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’।

গতবছর জুলাই আগস্ট মাসের সেই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে পালাবদল হয়ে গেল। রক্তাক্ত পথে শেখ শাহীর পতনের পর থেকে চরম ডামাডোলের মধ্যে চলা বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। তার শাসনে বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলার অবনতির, সংখ্যালঘু আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। যদিও ইউনূস সরকারের দাবি, আক্রান্তরা শেখ হাসিনার সমর্থক। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রশ্ন উঠছে অনির্বাচিত ইউনূস কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন। ইউনূসের দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার শেষ হলেই ক্ষমতা থেকে সরে যাব।

নির্বাচন কবে? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির পরেই পদ্মাপারের জনতা ফের ভোটের লাইনে দা়ঁড়াবেন। ভোট হতে পারে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে। দিল্লি প্রবাসী দেশহীন শেখ হাসিনা ভোট দেখবেন দূর থেকে।