অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ! জুলাই বিদ্রোহে মৃত্যুর দায় স্বীকার হাসিনার

Sheikh Hasina July Unrest

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জুলাই ২০২৪ এক রক্তাক্ত অধ্যায় হয়ে থাকবে। বিদ্রোহ, সেনা হস্তক্ষেপ ও শতাধিক প্রাণহানির সেই অস্থির সময়ে দেশ ছেড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ পনেরো মাস পর অবশেষে মুখ খুললেন তিনি। বিদেশে অবস্থানরত মুজিবকন্যা সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন—জুলাই বিদ্রোহের সময় নিরাপত্তাবাহিনী “নিশ্চয়ই কিছু ভুল” করেছিল।

Advertisements

হিংসা ঠেকাতে কঠিন সিদ্ধান্ত

হাসিনা বলেন, “সেই সময় পরিস্থিতি ছিল চরম উত্তপ্ত। হিংসা ঠেকাতে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। নিরাপত্তাবাহিনীর একাংশ যেভাবে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছিল, তা ভুল ছিল। তবে সরকার হিসেবে আমরা প্রাণহানি কমাতেই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।” তিনি আরও যোগ করেন, “যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য আমি শোকাহত। দেশের নেত্রী হিসেবে সেই মৃত্যুর দায় আমি নিচ্ছি। কিন্তু গুলি চালানোর নির্দেশ আমি দিইনি।”

   

বাংলাদেশজুড়ে জুলাই আন্দোলনে অন্তত ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে উপদেষ্টা সরকারের দাবি। তবে সেই সংখ্যাকে “অতিরঞ্জিত” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হাসিনা।

জাতীয় নির্বাচন নিয়েও মুখ খুললেন হাসিনা Sheikh Hasina July Unrest

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তাঁর অনুপস্থিতিতে দেশের দায়িত্ব নেয় মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা সরকার। এবার সেই সরকারের কর্মকাণ্ড ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও মুখ খুললেন তিনি।

হাসিনার দাবি, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে। নির্বাচন হলেও আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার পর তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।” তবে তিনি তাঁর সমর্থকদের সহিংসতার পথে না গিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

Advertisements

নিজের আমলে নির্বাচন কারচুপির অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হাসিনা। তাঁর বক্তব্য, “২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল। আওয়ামি লিগ বারবার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে, কোনওদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো বেআইনি পথে নয়। নির্বাচনী সংস্কারে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও ব্যালট বাক্স চালু করার কৃতিত্বও আমাদের।”

হাসিনা জমানায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুঠ

তবে উপদেষ্টা সরকারের অভিযোগ আরও ভয়ংকর—হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুঠ হয়েছে বলে তাদের দাবি। এ বিষয়ে কঠোর সুরে প্রতিক্রিয়া দিয়ে হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মোট বাজেটই এত নয়। যদি এত টাকা লুঠ হত, দেশের অর্থনীতি আজ ধসে যেত। বরং আমার আমলে অর্থনীতি ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে—যার স্বীকৃতি দিয়েছে আইএমএফ-সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা।”

অন্যদিকে ইউনূসের বিরুদ্ধেও তোপ দেগে হাসিনা বলেন, “যিনি ৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন, আজ তাঁর নামে হাজার হাজার কাঠা জমি, ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্কে। কিন্তু তাঁর বিদেশি বন্ধু বিল ও হিলারি ক্লিনটনের প্রভাবেই কেউ কিছু বলে না।”

একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক মুখ ছিলেন শেখ হাসিনা। আজ দেশান্তরে বসে তিনি আত্মসমালোচনার পাশাপাশি ফের প্রশ্ন তুললেন বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বৈধতা নিয়ে—যা স্পষ্টতই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের সূচনা করল।