হাসিনা–কামালের মৃত্যুদণ্ডের পর ইন্টারপোলের পথে ঢাকা, দিল্লিকে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি

sheikh hasina interpol red notice

sheikh hasina interpol red notice

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারতে থেকে প্রত্যর্পণের লক্ষ্যে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এই কূটনৈতিক ও আইনি তৎপরতা জোরদার হয়েছে।

Advertisements

বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, আইসিটি ইতিমধ্যেই গ্রেফতারি পরোয়ানা সংযুক্ত করে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারির প্রাথমিক আবেদন পাঠিয়েছে। এবার দোষসিদ্ধির রায়ের ভিত্তিতে নতুন করে রেড নোটিস চেয়ে আবেদন জানাতে চলেছে প্রসিকিউশন।

   

আইসিটি প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম বলেন, “দু’জনই পলাতক। তাই কনভিকশন ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে ইন্টারপোল থেকে নতুন রেড নোটিস চাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।”

দিল্লিকে খুব শিগগিরই চিঠি দেবে ঢাকা

রায় ঘোষণার পর আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত অনুরোধ পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিদেশ মন্ত্রকও জানিয়েছে, ‘নোট ভার্বাল’ প্রস্তুতির কাজ চলছে এবং তা কয়েক দিনের মধ্যেই নয়াদিল্লিতে পাঠানো হতে পারে।

ভারত সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর দিল্লির বার্তা ছিল নির্বিকার কিন্তু অর্থবহ—ভারত “বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে” এবং “সমস্ত স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে” কাজ করবে।

২০২৪-এর অস্থিরতা, পলাতক দুই নেতা sheikh hasina interpol red notice

গত সালের জুলাই–আগস্টে ছাত্র আন্দোলন ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে পরিস্থিতি দ্রুত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সেখান থেকেই ক্ষমতার পতন শেখ হাসিনার। পরে তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে ধারণা। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালও ভারতেই আত্মগোপনে আছেন বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

আন্যান্যদিকে, একই মামলায় প্রাক্তন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যে পরিণত হওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেও মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেয়েছেন।

Advertisements

প্রত্যর্পণ আইনে ধোঁয়াশা: হাসিনাকে ফেরানো কি সম্ভব?

২০১৩ সালের ভারত–বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই দোষী সাব্যস্ত পলাতকদের হস্তান্তরে বাধ্য। কিন্তু সেই চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম রয়েছে—যেসব মামলা ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’, সেগুলিতে প্রত্যর্পণ না করার অধিকার উভয় দেশেরই আছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাঁর মামলা এই ধারা প্রয়োগযোগ্য ‘গ্রে জোন’-এর মধ্যেই পড়ে।

রায় ‘রাজনৈতিক’ বলে দাবি দুই দণ্ডিতের

আইসিটির নিয়ম অনুযায়ী, হাসিনা ও কামালকে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে আপিল করতে হবে। কিন্তু তাঁরা ইতিমধ্যেই রায়কে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগও বিবৃতিতে বলেছে, এই রায় “অগণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তী সরকারের সাজানো আদালতের পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত।”

কামালের অভিযোগ, আদালতটি তৈরি হয়েছিল “আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।” পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর দাবি, “ঘটনার আড়ালে আরও বড় আন্তর্জাতিক শক্তি সক্রিয়।”

পরিস্থিতি এখন নয়াদিল্লির দিকে

ঢাকা যতই জোরদারভাবে প্রত্যর্পণের পথে চাপ বাড়াক, শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও কামালের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে ভারতের অবস্থান ও সিদ্ধান্তের ওপর। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এই প্রশ্নটি এখন অত্যন্ত সংবেদনশীল ও উচ্চমার্গের কূটনৈতিক পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়েছে দুই দেশকে।

Bangladesh: Bangladesh seeks Interpol Red Notices for the extradition of former PM Sheikh Hasina and Kamal from India after the International Crimes Tribunal issued death sentences.