ঢাকা: মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina extradition)। সোমবার ক্যাঙ্গারু কোর্ট হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু যেহেতু তিনি এই মুহূর্তে ভারতের শরণার্থী সেহেতু এই মুহূর্তে কার্যত তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে ভারত সরকারের হাতে।
মোদী সরকার যদি এই একই অপরাধে হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে তাহলে হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা হবে। আর যদি ভারত সরকার মনে করে হাসিনা দোষী নয় তবে ভারত হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য নয়।
বাংলাদেশি ট্রলারসহ গ্রেফতার ২৯ মৎস্যজীবী
সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তিন সদস্য বিচারকের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। গত বছরের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় সরকারের নির্দেশে চালানো নির্মম দমন-পীড়নের জন্য হাসিনা এবং তার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এই দমন-পীড়নে অন্তত ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন, হাজার হাজার আহত এবং অসংখ্যের গুমের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এই রায় যতই কঠোর হোক না কেন, হাসিনার আসল ভবিষ্যৎ এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে।
কারণ, গত আগস্ট মাস থেকে তিনি ভারতে শরণার্থী জীবন যাপন করছেন। বাংলাদেশের এই ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’-এর রায় কতটা বৈধ এবং ভারত কতটা এতে সহযোগিতা করবে এটাই এখন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন।২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামে। কিন্তু হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ, আরএবি এবং সেনাবাহিনী মিলে চালানো অত্যাচারের ফলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ড্রোন দিয়ে নজরদারি, সরাসরি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠে।
আইসিটির বিচারে প্রমাণিত হয় যে, হাসিনা নিজে এসবের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি ফোনে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী শাকিলকে বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা করা ২২৬ জনকে হত্যা করার নির্দেশ। এছাড়া, তিনি ঘৃণামূলক বক্তৃতা দিয়ে উস্কানি দিয়েছিলেন এবং অপরাধীদের শাস্তি না দেওয়ার জন্য দায়ী।
সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি রাষ্ট্রের সাক্ষী হয়েছেন। বিচারকরা বলেছেন, “হাসিনা উস্কানি, হত্যার নির্দেশ এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য দায়ী।” বিচারক কক্ষে শহীদ পরিবারগণের হাততালির শব্দে ভরে ওঠে, কিন্তু হাসিনা নেই সেখানে। তিনি ভারতে লুকিয়ে আছেন।
এই রায়ের পর বাংলাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকায় সেনা, পুলিশ এবং পরমিলিটারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে কাঁচা বোমা বিস্ফোরণ এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যাতে কোনো হতাহত না হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা চরমে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, এটি ‘শহীদদের জয়’। জামায়াতে ইসলামীর নেতা মিয়া গোলাম পারওয়ারও এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে অভিবাদন জানিয়েছেন।
কিন্তু হাসিনার সমর্থকরা এটাকে ‘রিগড ট্রাইব্যুনাল’ বলে অভিহিত করছেন। তার ছেলে সাজীব ওয়াজেদ বলেছেন, এটি ‘আগে থেকেই ঠিক করা ফলাফল’, এবং তারা আপিল করবেন না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো, যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এই ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এমন রায় দেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।


