ঢাকা: বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মামলার শুনানি সম্পন্ন করেছে। ফাঁসি না আমৃত্যু কারাবাস? হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হবে আগামী ১৩ নভেম্বর৷ ওই দিন রায় দেবে ঢাকা আন্তর্জাতিক অপরাধদমন আদালত।
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনকালে বিরোধীদের ওপর নির্যাতন, গুম করা এবং অবৈধ আটক-নির্যাতনের ঘটনায় তাঁর প্রত্যক্ষ হাত ছিল। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। সেই সময় দেশজুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল তথাকথিত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেন, “আমার মক্কেল পালায়নি। তিনি দেশ ছাড়তে চাননি। নিজে বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে এখানেই মরব, দেশ ছাড়ব না।’ তবে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, তাঁকে বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে। তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছেড়েছেন, লুকিয়ে নয়।”
ন্যায়বিচার উভয় পক্ষেরই প্রাপ্য Sheikh Hasina Crimes Verdict
আইনজীবীর যুক্তি, মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণের জন্য প্রয়োজন, সেই অপরাধের মাধ্যমে কোনও জাতি, গোষ্ঠী বা জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায় থাকতে হবে। “এক্ষেত্রে যেভাবে হিটলার ইহুদিদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন, সেই ধরণের প্রমাণ নেই। তাই ন্যায়বিচার উভয় পক্ষেরই প্রাপ্য, এবং এর দায়িত্ব ট্রাইব্যুনালের।”
এর আগে ৮ অক্টোবর, ICT দুটি পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা-সহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম এবং নির্যাতনের একাধিক ঘটনায় তাঁরা জড়িত ছিলেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানায় কাদের নাম
ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চ, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে, অভিযুক্তদের ২২ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিল।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি গ্রেফতারি পরোয়ানায় নাম রয়েছে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রাক্তন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, এবং প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ-এর। বাকি অভিযুক্তদের বেশিরভাগই সেনা কর্মকর্তা।
দুটি মামলার বিস্তারিত:
এক মামলায় শেখ হাসিনা ও তার উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক-সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিরোধী কর্মীদের অপহরণ করে TFI সেল-এ আটক রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন।
অন্য মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক সিদ্দিক এবং আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভুক্তভোগীদের DGFI-এর যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্রে (JIC) আটক রেখে নির্যাতন চালিয়েছেন। এ মামলায় পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের ধারা এবং পাঁচজন প্রাক্তন DGFI পরিচালককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মামলা নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করছে। আদালতের রায় কেবল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না— বরং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসেও তৈরি করবে এক যুগান্তকারী মোড়।


