Bangladesh: ভাঙা হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে, সংরক্ষণের আর্জি ভারতের

ঢাকা: বাংলাদেশের ময়মনসিংহে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে ভাঙার কাজ শুরু করেছে (Satyajit Ray Ancestral Home Demolition) সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে গড়ে তোলা…

Satyajit Ray Ancestral Home Demolition

ঢাকা: বাংলাদেশের ময়মনসিংহে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে ভাঙার কাজ শুরু করেছে (Satyajit Ray Ancestral Home Demolition) সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে আধা-পাকা নতুন ভবন। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে উঠেছে প্রবল বিতর্ক। ভারত সরকারের পাশাপাশি দুই বাংলার সংস্কৃতি-সচেতন মহলে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে।

বাড়িটি ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ঠিকানা

এই বাড়িটি এক সময় ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ঠিকানা, সত্যজিত রায়ের ঠাকুরদা, বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃত। বহু ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্মৃতিতে মোড়া শতবর্ষ প্রাচীন এই ভবন একসময় ব্যবহৃত হতো ময়মনসিংহ শিশু অ্যাকাডেমি হিসেবে। কিন্তু গত দশ বছর ধরে তা ছিল সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। অবশেষে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, সেখানে তৈরি হবে নতুন একটি আধা-কংক্রিট কাঠামো।

   

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম The Daily Star-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় শিশু বিষয়ক দফতরের কর্তা জানিয়েছেন, “বাড়িটি বহু বছর ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল, ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছিল। তাই নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি।” কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ইতিহাসের স্মৃতিকে এভাবে মুছে ফেলাই কি একমাত্র উপায় ছিল?

ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া

ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে, যা তাঁর দাদু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সম্পত্তি, তা ভাঙা হচ্ছে। এই বাড়িটি বাংলা নবজাগরণের এক মূল্যবান নিদর্শন, দুই দেশের সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের প্রতীক।”

ভারত সরকার এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটিকে সংরক্ষণ করে সাহিত্য ও সংস্কৃতির জাদুঘরে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার আগ্রহও জানিয়েছে ভারত।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন

ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, “ময়মনসিংহে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত পৈতৃক ভিটে ভেঙে ফেলা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। রায় পরিবার বাংলা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এই বাড়ি শুধু একটা স্থাপনা নয়, এটি আমাদের চেতনায় গাঁথা ইতিহাসের অংশ।”

Advertisements

তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সাধারণ নাগরিকদের কাছে ঐতিহ্য রক্ষার আবেদন জানান। একইসঙ্গে ভারত সরকারেরও সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানান।

স্থানীয় প্রতিবাদ ও ইতিহাসের বিস্মৃতি

স্থানীয় নাগরিক ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণ করে তা জাদুঘর বা স্মারক হিসেবে সংরক্ষণের। কিন্তু বছরের পর বছর অবহেলার কারণে তা ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় কবি শামীম আশরাফ বলছেন, “বাড়িটা ছিল ঐতিহাসিক। ছাদে ফাটল ধরলেও, ওটা যে উপেন্দ্রকিশোরের বাড়ি, তা যেন কেউ মনে রাখেনি।”

একটি ভাঙা বাড়ির মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার এক টুকরো ইতিহাস

সত্যজিৎ রায় শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের কাছে এক অনন্য শিল্প প্রতিভা। তাঁর শিকড় যেখানে, সেই মাটির স্মৃতি মুছে যাওয়া মানে একেবারে মূল থেকে একটুকরো ইতিহাস কেটে নেওয়া। রায় পরিবার-উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধিরী, সুকুমার এবং সত্যজিৎ রায়-তাঁরা তিন প্রজন্ম ধরে গড়ে তুলেছিলেন এক অনন্য সাহিত্য ও শিল্পধারা।

এই বাড়ির অস্তিত্ব ছিল সেই ধারার এক জীবন্ত স্মারক। প্রশ্ন উঠছে, তা কি শুধুই অবহেলার কারণে মুছে যেতে বসেছে?