‘ওঁরা হয়তো মাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে’, রায় ঘোষণার আগে আশঙ্কা হাসিনাপুত্র জয়ের

Sajeeb Wazed Election Warning

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও উপদেষ্টা সাজিব ওয়াজেদ জয় কঠোর সতর্কতা দিলেন আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে দলীয় সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করবেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসন্ন রায়কে সামনে রেখে তিনি ইঙ্গিত দিলেন, হাসিনাকে “মৃত্যুদণ্ডেও দণ্ডিত করা হতে পারে।”

Advertisements

নির্বাচন কোনোভাবেই হতে দেব না

ঢাকায় ট্রাইব্যুনালের গুরুত্বপূর্ণ রায়ের আগেই রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াজেদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে যদি আন্তর্জাতিক মহল হস্তক্ষেপ না করে। তাঁর কথায়, “আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন কোনোভাবেই হতে দেব না। আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে। আন্তর্জাতিক সমাজ কিছু না করলে সহিংসতা অবশ্যম্ভাবী।”

   

ওয়াজেদের দাবি, ৭৮ বছর বয়সি হাসিনাকে ভারতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। “আমার মা নিরাপদে আছেন। ভারত তাঁর পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে,”—বলেন তিনি।

টেলিভিশনে সরাসরি রায়, অনুপস্থিতিতেই দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা Sajeeb Wazed Election Warning

সোমবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়। হাসিনার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসিনা অবশ্য এসব অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে বলেছেন, এটি তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নস্যাৎ করার একটি “পরিকল্পিত প্রচেষ্টা”।

রাষ্ট্র সংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে অন্তত ১,৪০০ মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়, যাদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান। স্বাধীনতার পর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংস সময় বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সেই সময় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, যা দেশের রপ্তানি অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। ২০২৪ সালের অগস্টে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং তখন থেকেই সেখানেই নির্বাসনে রয়েছেন।

ইউনূস সরকারের পাল্টা দাবি—‘কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নেই’

২৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী প্রশাসনের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সরকারের দাবি, বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে—এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সরকারের মুখপাত্রের কথায়, “ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, নিয়মিত নথিপত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।”

অন্যদিকে হাসিনা অক্টোবরে রয়টার্সকে জানান, দিল্লিতে তিনি মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারলেও নিরাপত্তা নিয়ে সদা সতর্ক। তাঁর পরিবার ইতিহাসে ভর করেছে রক্তাক্ত স্মৃতি—১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছিলেন তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা ও তিন ভাই।

Advertisements

ঢাকায় উত্তেজনার পারদ চড়ছে—বোমা বিস্ফোরণ, আগুন, গ্রেফতার

রায়ের আগের দিন ঢাকাজুড়ে উত্তেজনা চরমে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এর আগে ১২ নভেম্বরও ৩০টির বেশি বিস্ফোরণ এবং ডজনখানেক বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অন্তত কয়েকজন সন্দেহভাজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত ৪০০ বর্ডার গার্ড মোতায়েন, চেকপোস্ট বৃদ্ধি এবং জনসমাগমে বিধিনিষেধ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের বক্তব্য, জনগণের জীবন-সম্পদের নিরাপত্তাই এখন প্রধান লক্ষ্য।

রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে

ওয়াজেদ স্বীকার করেছেন, তিনি এবং হাসিনা দেশে থাকা দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আলোচনা করছেন না। বিএনপি-ই আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরার সবচেয়ে বড় দাবিদার বলে সাধারণ ধারণা।

ওয়াজেদের বক্তব্য, “দেশজুড়ে হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভ—সব কিছুই আরও তীব্র হবে। গণবিক্ষোভ প্রতিদিন বাড়ছে।”

প্রেক্ষাপট—চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় থেকেও বিতর্কের কেন্দ্রে হাসিনা

২০২৪ সালের শুরুর নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বয়কট করলেও হাসিনা টানা চতুর্থ বার প্রধানমন্ত্রী হন। উন্নয়নগত অগ্রগতির জন্য আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়ালেও, শাসনব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর সরকার ক্রমাগত সমালোচনার মুখে পড়ে।

Bangladesh: Sajeeb Wazed warns AL supporters will obstruct Feb elections unless the ban is lifted, fearing a death sentence for Sheikh Hasina from the ICT on crimes against humanity charges. Wazed confirms Hasina is safe in India but warns international intervention is needed to prevent pre-election violence in Bangladesh.