বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল, এখন শেখ হাসিনার দলের দফতর যেন ফ্রি টয়লেট!

মাত্র মাস পাঁচ আগেও কড়া নিরাপত্তায় মোড়া ঝকঝকে কর্পোরেট দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে যে কোনও সাধারণ বাংলাদেশির হাঁটু কেঁপে যেত! কারণ ওই ভবনটিতে ক্ষমতা অধিষ্ঠান করছে।…

Sheikh Hasina

মাত্র মাস পাঁচ আগেও কড়া নিরাপত্তায় মোড়া ঝকঝকে কর্পোরেট দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে যে কোনও সাধারণ বাংলাদেশির হাঁটু কেঁপে যেত! কারণ ওই ভবনটিতে ক্ষমতা অধিষ্ঠান করছে। এখন তীব্র দুর্গন্ধে এই বাড়ির আস পাশ দিয়ে যেতে হয়। এমনই অবস্থা গণবিক্ষোভে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ (Bangladesh Awami League) কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঠিক যেন বিনা পয়সার গণশৌচালয়। চোর ছ্যাঁচড়ার ঘাঁটি।

গত পনের বছর বাংলাদেশের একটানা ক্ষমতায় ছিল উপমহাদেশের অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ঢাকায় দলটির নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন গত ৫ আগস্ট থেকে পোড়ো বাড়িতে পরিনত হয়েছে। গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) জমানা শেষ। তিনি ভারতে আশ্রিত। বাংলাদেশে তিনি গণহত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে শেখ হাসিনার নামে মামলা চলছে। তাকে ফেরত দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চিঠি এসেছে বলে জানিয়েছে ভারত। ঢাকা-নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সংঘাত চলছেই।

   

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র ‘জনকণ্ঠ’। এটি মূলত আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত সংবাদের জন্য আলোচিত। এই সংবাদপত্রের একটি খবরের শিরোনাম-“আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন গণশৌচাগার”। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,”ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয় সেই কথাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলো। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আগুনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় এগুলো। এসব ভবন এখন নেশাগ্রস্ত মানুষ আর ছিন্নমূলদের দখলে। নিয়মিত চলছে মলমূত্র ত্যাগের কাজ।”

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ শাসনের অবসান হয়েছে গত ৫ আগস্ট। সেদিন উত্তেজিত জনতার আক্রোশ গিয়ে পড়েছিল শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন, ‘জাতির পিতা’ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, বিখ্যাত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি (১৯৭৫ সালে তাকে যেখানে সপরিবারে খুন করা হয়েছিল) এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নতুন কার্যালয়টি। আগুন ধরিয়ে লুট চালানো হয়।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় দফতরটি যেন দলটির বাস্তব অবস্থার প্রতীক। গত ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থকরা যেমন পারছেন নিজেদের বাঁচাচ্ছেন। নেতারা হয় পলাতক যারা ধরা পড়েছেন জেলে আছেন। কেউ কেউ বিপুল অর্থ ঘুষ দিয়ে আত্মগোপনে আছেন।

‘জনকণ্ঠ’ জানিয়েছে, “মাত্র কয়েকদিন আগেও যে ঘরগুলো ছিলো ক্ষমতার ভরকেন্দ্র, এখন তা যেন নির্মম পরিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। আওয়ামী লীগের  যে কার্যালয়গুলো থেকে দলের গুরুত্বপুর্ণ কর্মকান্ড পরিচালিত হতো, হাজারো নেতাকর্মীর ভিড়ে থাকতো জমজমাট। এখন সেটি কেবলই ধ্বংস স্তুপ। দলটির কার্যালয় পরিণত হয়েছে গণশৌচাগারে।ভবনটির অন্য ফ্লোরগুলোতে চলে পথশিশু ও মাদকসেবিদের আড্ডা। ছিন্নমূল মানুষের রাত যাপনের  ঠিকানা হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি।” এতে আরও লেখা হয়েছে, “রাস্তা সংলগ্ন শেষ ভবনটির কিছু অংশ খোলা থাকায়  সেখানেই চলে পথচারীদের মলমূত্রত্যাগের কাজ।”

“ভোরের কাগজ” জানিয়েছে, ‘ভবনের বাইরের দৃশ্য দেখে মনে হয়, একটি ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। পোড়া দেয়ালগুলো ছাড়া আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্টিলের নামফলকগুলোও তুলে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। পূর্ব পাশের একটি ভবনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবনের ভেতর থেকে সব ধরনের মালপত্র বের করে নেওয়া হয়েছে। নিচতলায় এখনো আগুনে পোড়া ছাই, ভাঙা কাচ, পোড়া কাঠ এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ রয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে ‘দ্বিতীয় তলার ফ্লোরে মিশে রয়েছে পোড়া কাগজপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের টুকরো। আগুনে পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র এবং ভাঙা কাচ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। ভবনের প্রতিটি তলায় মাদকের বোতলও দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খবর পাওয়া গেছে যে, ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা আর সেখানে আসেন না, ফলে মাদকসেবী এবং ছিন্নমূল মানুষদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল।’

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনে বাংলাদেশের নির্বাচন বারবার বয়কট করে জাতীয় সংসনে শূন্য হয়ে গেছিল বিএনপি। দলটির নেত্রী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিভিন্ন দূর্নীতির মামলায় জেলে গেছিলেন। খাতায় কলমে না হলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপি তার সমর্থক জমায়েত করার শক্তিতে মূল বিরোধী শক্তি হিসেবে চর্চিত ছিল। ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাধিকবার তালা পড়েছে। তবে সেটির ভগ্নদশা হয়নি।

গণবিক্ষোভের দেশ ছাড়লেও আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন শেখ হাসিনা। তিনি বারবার দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করার বার্তা দিয়ে চলেছেন।বাংলাদেশে একমাত্র গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিরাট বিরাট মিছিল চলেছে। অন্যত্র দলটি নিশ্চিহ্ন। জানা যাচ্ছে, নিচু তলার আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতারা দলে দলে দলবদল করছেন। বেশিরভাগ বেছে নিচ্ছেন একদিনের শত্রুপক্ষ বিএনপি!

শেখ হাসিনার জমানা শেষ হবার পর বাংলাদেশ চলছে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা করবে। বিশ্লেষণে উঠে আসছে আওয়ামী লীগ কোনওভাবেই নির্বাচনে নামার পরিস্থিতিতে নেই। দলটির অন্যতম শাখা সংগঠন ‘ছাত্রলীগ’ নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত।

এক নজরে আওয়ামী লীগ

(১)সংযুক্ত পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগ ভেঙে  পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৯ সালে।
(২) পরবর্তীতে দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ সরানো হয়। নতুন নাম হয়েছিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।
(৩) ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ তৈরি হয়। তখন থেকে দলটির পোশাকি নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
(৪) ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে সরকার গঠন করে।
(৫) ১৯৯৬ সালে ফের সরকার গঠন করে।
(৬) ২০০৮ সাল থেকে একটানা পনের বছর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ।
(৭) ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভে দলটি ক্ষমতা হারায়