কলকাতা ‘হাই’ কানেকশন বাংলাদেশি ‘কুবের’ বিপুল হীরের মালিক পড়ল জালে

যেন কুবেরের সম্পত্তি! এমলই বিপুল হীরে, সোনার সঞ্চয় করে বাংলাদেশের (Bangladesh) রত্ন ব্যবসায়ের পথিকৃত বলে চর্চিত দিলীপ আগরওয়ালা (Dilip Kumar Agarwala) এবার পুলিশের জালে। অভিযোগ,…

Bangladeshi Diamond Merchant Dilip Kumar Agarwala

যেন কুবেরের সম্পত্তি! এমলই বিপুল হীরে, সোনার সঞ্চয় করে বাংলাদেশের (Bangladesh) রত্ন ব্যবসায়ের পথিকৃত বলে চর্চিত দিলীপ আগরওয়ালা (Dilip Kumar Agarwala) এবার পুলিশের জালে। অভিযোগ, শেখ হাসিনার শাসনে টাকা খাইয়ে ভারতে সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত তিনি। হাইপ্রোফাইল ব্যবসায়ীর রত্ন সাম্রাজ্য ছড়িয়ে আছে ভারতেও। বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রভাবশালী জহুরীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।

গণবিক্ষোভে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর ও আওয়ামী লীগের বিশেষ মিত্র বলে পরিচিত রত্ন ব্যবসায়ী দিলীপ আগরওয়ালা। সরকার পতনের পর থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। ভারতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি।

   

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গণবিক্ষোভের সময় লুণ্ঠিত অস্ত্রসম্ভার উদ্ধারে সশস্ত্র অভিযানে নেমেছে। এই অভিযান চলাকালীন রত্ন ব্যবসায়ী দিলীপ আগরওয়ালার অট্টালিকা ঘেরাও করে ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব)।

ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে অবস্থিত ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সোনা ও হীরা চোরাচালানের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এবং এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে দিলীপ আগরওয়ালার উপর নজর পড়ে প্রথমেই।

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালার বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হীরে আমদানির নামে বিদেশে অর্থপাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ,তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শো-রুমের মাধ্যমে প্রকৃত হীরের বদলে উন্নত মানের কাঁচের টুকরো বিক্রি করতেন।

দিলীপ আগরওয়ালার বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দুবাই ও সিঙ্গাপুরে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, পড়শি দেশের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ জমা করার তথ্য মিলেছে। অভিযোগ,বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন তিনি। ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

দিলীপ আগরওয়ালা, বাংলাদেশের কুবের
পুরো নাম দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তিনি 1968 সালে সংযুক্ত পাকিস্তানের অন্তর্গত পূর্ব পাকিস্তানের চুয়াডাঙ্গার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অমিও কুমার আগরওয়ালা জার্মানিতে ছিলেন। দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত হন। ব্যবসায়ী পিতার সন্তান দিলীপ আগর়ওয়ালা পরে বেছে নেন রত্ন ব্যবসা। পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ তৈরির পর আগরওয়ালা পরিবার হয়ে ওঠে অন্যতম প্রভাবশালী। দিলীপ আগরওয়ালা ২০০৫ সালে বাংলাদেশে বিরাট রত্ন ব্যবসা গড়ে তোলেন। অভিযোগ, সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগের অন্যতম ফান্ড দাতা দিলীপ আগরওয়ালের সোনা পাচার শুরু করেন।

আম্তর্জাতিক সীমান্তের লাগোয়া বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় দিলীপ আগরওয়ালার পৈত্রিক বাড়ি। তাঁর নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা থেকেই ভারতের দিকে থাকা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সোনা পাচার চলত। খুলনা বিভাগের সীমান্তে বিজিবি রক্ষীরা গত কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতিদিন কোটি ও লক্ষাধিক টাকার সোনার বারসহ পাচারকারীদের গ্রেফতার করত। দিলীপ আগরওয়ালার বিরুদ্ধে সূত্র মিললেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতেন।

কলকাতায় বাংলাদেশি সাংসদ খুন ও দিলীপ আগরওয়ালা
গত ১৩ মে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সাংসদ আনোয়ারুল আজীমকে কলকাতায় খুন করা হয়। এই চাঞ্চল্যকর খুনের তদন্তে উঠে আসে দিলীপ আগরওয়ালার সোনা পাচারের বিষয়টি। তদন্তে উঠে এসেছে সাংসদ আনোয়ারুল সোনা পাচারের পিছনে অনেক তথ্য জেনে ফেলেছিলেন।