পাকিস্তানে ত্রাস সৃষ্টি করে এবার বাংলাদেশে নকশা কষছে ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (TTP)। জিহাদি সংগঠনটি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে-এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্টে (Pakistani Taliban in Bangladesh)।
এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য নয়, ভারতের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কারণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দীর্ঘ ৪,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি।
গ্রেফতার দুই সন্দেহভাজন
সম্প্রতি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি, শামিন মাহফুজ এবং মহম্মদ ফয়সালকে। ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পাকিস্তানি তালিবান গোষ্ঠী TTP-র সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। বাংলাদেশের ‘ডেইলি স্টার’ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে শামিন মাহফুজ একজন কুখ্যাত জঙ্গি। তিনি একাধিক জঙ্গি সংগঠনের নেতা ছিলেন৷ JMB ও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে জেএমবির হয়ে নিয়োগের দায়ে গ্রেফতার হওয়া শামিন ২০২৩ সালে আবারও ধরা পড়েন বিস্ফোরক-সহ। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা চলছে সন্ত্রাস দমন আইন, বিস্ফোরক আইন ও অস্ত্র আইনে।
জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির
অভিযোগ, ২০২০ সালে বান্দরবানে Kuki-Chin National Front (KNF)-এর নেতা নাথান বোম-এর সঙ্গে যৌথভাবে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেছিলেন তিনি। উল্লেখযোগ্যভাবে, শামিন ও নাথান বোম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ছিলেন। অন্যদিকে, ফয়সালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলমান।
আন্তর্জাতিক জঙ্গি-যোগ
এরই মধ্যে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্ট। মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। রিক্রুটমেন্ট, তহবিল সংগ্রহ, ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রপাগান্ডা ছড়ানোয় জড়িত ছিল তারা। কিছু গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে সিরিয়া ও বাংলাদেশের আইএস মডিউলে অর্থ পাঠানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আফগানিস্তানে TTP-তে যোগ বাংলাদেশিদের
একের পর এক খবরে উঠে এসেছে আরও বিস্ফোরক তথ্য। অন্তত আটজন বাংলাদেশি নাগরিক বর্তমানে আফগানিস্তানে পাকিস্তানি তালিবান গোষ্ঠী TTP-র সদস্য হিসেবে সক্রিয়, এমনই দাবি ‘দ্য ডিসেন্ট’ নামক একটি ডিজিটাল মিডিয়ার। এদের মধ্যে একজন এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে সেনার গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
নিরাপত্তা হুঁশিয়ারি ও রাজনৈতিক বিতর্ক
সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হল-বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রশাসনের একাংশ এখনও এ বিষয়ে সচেতন নয় বা অস্বীকার করছে জঙ্গি উপস্থিতি। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্লেষক।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই জঙ্গি সংগঠনের এই সক্রিয়তা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। ভারতের জন্যও এই প্রবণতা উদ্বেগজনক, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকে।