কলকাতা: তিন দশকের বেশি সময় পরে দ্বিপাক্ষিক সফরে ঢাকায় যাচ্ছেন পাকিস্তানের কোনও বিদেশমন্ত্রী। আগামী ২৩ অগাস্ট দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে পা রাখবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইসাক দার (Pakistan Foreign Minister Dhaka Visit)। এই সফরের প্রাক্কালে কূটনৈতিক মহলের নজর ঘুরেছে ভারতের দিকেও।
আঞ্চলিক স্বাধীনতার বার্তা
সোমবার ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাফ জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠবে, সে সিদ্ধান্ত নয়াদিল্লি নিতে পারবে না। তাঁর বক্তব্য, “পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন হবে, সেটা আমি ঠিক করি না। তেমনই পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী হবে, সেটা ভারত ঠিক করবে, এমন তো নয়।”
এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তরফে একপ্রকার কূটনৈতিক সংহতি এবং আঞ্চলিক স্বাধীনতাকেই গুরুত্ব দেওয়ার বার্তা উঠে এল বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
ইতিহাসের পর্ব পেরিয়ে সম্পর্ক উষ্ণ করার ইঙ্গিত
১৯৭১ সালে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। সেই অতীত ইতিহাসের ছায়া পড়েছিল ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে। শেখ হাসিনার সরকারের সময় সেই সম্পর্ক কার্যত ছিল জমাট। বাণিজ্য, কনসুলার পরিষেবা বা দ্বিপাক্ষিক বিনিময়, সব ক্ষেত্রেই ছিল শীতলতা।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে হাসিনা সরকারের পর গঠিত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের আমলে, দৃশ্যপট বদলেছে। সরাসরি বাণিজ্য ফের চালু করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ঢাকায় সফর করেছেন পাকিস্তানের বিদেশসচিব আমনা বালোচ। এবং সেই প্রেক্ষিতেই এবার ঢাকায় আসছেন পাক বিদেশমন্ত্রীও।
তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করেছেন, বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের সঙ্গে ‘স্বাভাবিক’ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। “অতীতে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পর্ক না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ছিল বাংলাদেশ। এখন সে জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কও অন্য দেশগুলোর মতোই রাখার পক্ষেই আমরা,” বলেন তিনি।
কী থাকছে দারের সফরে?
ইসাক দারের সফরে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কনসুলার পরিষেবা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, এইসব বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা প্রবল।
এই সফর হওয়ার কথা ছিল আরও আগে, গত এপ্রিল মাসেই। কিন্তু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে তা স্থগিত হয়।
দিল্লির দিকেও স্পষ্ট বার্তা?
ঢাকা থেকে বারবার উঠে আসছে ‘স্বাধীন কূটনৈতিক অবস্থান’-এর বার্তা। নয়াদিল্লি তার প্রভাব-পরিসর ধরে রাখতে চাইলে, এই নতুন বাস্তবকে অস্বীকার করে থাকা মুশকিল, এমনটাই মনে করছেন দক্ষিণ এশিয়া-ভিত্তিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষত, বঙ্গোপসাগর থেকে শুরু করে পাকিস্তান-চীন জোটকে সামনে রেখে ভারতীয় ভূ-কৌশলগত অবস্থান কতটা চাপে পড়ে, সেটাও এই সফরের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে।