Durga Puja 2025: দুর্গা প্রতিমা ভাঙার বিতর্ক ঢাকতে তড়িঘড়ি ঢাকেশ্বরী পরিদর্শনে মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশে একটি মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের পর দেশটিতে আসন্ন দুর্গা পূজা (Durga Puja 2025) উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার। কুষ্টিয়ায় প্রতিমা ভাঙচুরের পরেই…

Muhammad Yunus Visits Dhakeshwari Temple Amid Durga Puja 2025

বাংলাদেশে একটি মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের পর দেশটিতে আসন্ন দুর্গা পূজা (Durga Puja 2025) উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার। কুষ্টিয়ায় প্রতিমা ভাঙচুরের পরেই তড়িঘড়ি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করলেন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস।

জানা গেছে কুষ্টিয়ায় দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরে জড়িতদের ধরতে তদন্ত চলছে। হামলাকারীরা প্রমাণ ঢাকতে ওই মন্দিরের ক্যামেরা খুলে নিয়ে পালায়। এই ঘটনার জেরে বাংলাদেশে বিতর্ক। যদিও ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার জমানায় মন্দিরে হামলার ঘটনা বারবার ঘটে়ছিল।

   

হাসিনা জমানা পতনের পর দেশটির হিন্দু বৌদ্ধসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা হয়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, আক্রান্তরা শেখ হাসিনার সমর্থক। সব থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন হাসিনার দলের মুসলমান সদস্যরা।

গণবিদ্রোহে হাসিনার পতনের পর ইসলামি সংগঠনগুলি আরো বেশি সক্রিয়। জামাত ইসলামির দাবি, মুসলিম সংখ্যাগুরু বাংলাদেশে সকল ধর্মের সমান অধিকার আছে। জামাত ঘনিষ্ঠ অম্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার বার্তা দিয়েছিলেন।

আসন্ন দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে বলে জানাচ্ছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে পূজামন্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিভিন্ন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দরা।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সবসময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হওয়ার, কথা বলার সুযোগ হয়।’ এসময় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা।

হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজা মন্ডপ বেড়েছে। সারাদেশে পূজা মন্ডপ প্রস্তুতের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল পক্ষ থেকে এবারের পূজায় সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবকে ধন্যবাদ জানান তারা।

Advertisements

নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের সকল পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন হবে বলে আমরা আশা করছি।

এসময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।

তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এজন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গতবছরের মতো এবছরও পূজায় আমরা দুদিন ছুটি পেয়েছি। এজন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন। বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সাথে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সকলে সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক। আপনার বক্তব্য সবসময় আমাদেরকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কোনো সরকার প্রধানের এত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ আমরা এই প্রথম দেখলাম।’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ্য করেছি, গত এক বছর ধরে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেইক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল মানুষের কল্যাণ হবে আমরা সেটাই কামনা করি।’

বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সকল ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একটি মন্দির করে দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি মন্দিরে স্নানাগারের জন্য সিড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। যেসকল অস্বচ্ছল মন্দির প্যাগোডা, গির্জা রয়েছে তাদেরকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। অস্বচ্ছল ব্যক্তি বিশেষ করে বিধবা নারীদের জন্য আমরা সহায়তা দেওয়া সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অনাথ আশ্রমগুলোকেও সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’