চিনের পর নেপালের সামনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে কৌশলী বার্তা ইউনূসের

ঢাকা: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন অর্থনৈতিক বলয় গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—পরিচিত…

muhammad yunus south asia plan

ঢাকা: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ায় এক নতুন অর্থনৈতিক বলয় গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—পরিচিত ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে।

ঢাকায় নেপালের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেপুটি স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে ইউনূস বলেন, “এই অঞ্চলকে নিয়ে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হওয়া উচিত।” তিনি জোর দেন হাইড্রোপাওয়ার, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো খাতে যৌথ বিনিয়োগ ও উদ্যোগের ওপর।

   

জ্বালানি খাতে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি: ভবিষ্যতের দিশা

আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশ-নেপাল-ভারত ত্রিপাক্ষিক বিদ্যুৎ চুক্তির বিষয়। এর আওতায় ৪০ মেগাওয়াট নেপালি জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে। এটি কেবল বাণিজ্য নয়, বরং অঞ্চলীয় সহযোগিতার বাস্তব উদাহরণ। ইউনূস বলেন, “এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের সংযুক্ত করবে শক্তির মাধ্যমে, স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়বে।”

স্বাস্থ্যখাতেও সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ muhammad yunus south asia plan

একই আলোচনায় তিনি জানান, রংপুরে নির্মাণাধীন ১,০০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের রোগীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তাঁর কথায়, “আমরা চাই একটি আঞ্চলিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা তৈরি হোক। সবাই মিলে উপকৃত হই।” তিনি একে shared prosperity বা সমবায় সমৃদ্ধি বলেও উল্লেখ করেন।

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে চিনকে আহ্বান, জন্ম নেয় বিতর্ক

তবে আলোচনার বাইরে গিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় ইউনূসের চিন সফরের সময় দেওয়া এক বক্তব্য ঘিরে। সেখানে তিনি বলেন, “ভারতের সাতটি রাজ্য ল্যান্ডলকড। তাদের সাগরের পথে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশই তাদের একমাত্র দরজা।” তিনি চিনকে আহ্বান জানান, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উৎপাদন, বিপণন ও বাণিজ্য বিস্তারে বিনিয়োগ বাড়াতে।

তাঁর মতে, “নেপাল ও ভুটানের জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে এনে চিনে রপ্তানি করা সম্ভব। বাংলাদেশ হতে পারে অঞ্চলটির লজিস্টিকস ও প্রডাকশন হাব।”

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া: অভ্যন্তরীণ ভূগোল কি বিদেশনীতির হাতিয়ার?

ভারতের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল এই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, “চিন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতেই পারে। তবে ভারতের সাতটি রাজ্য ল্যান্ডলকড—এই তথ্য চিনের জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক?”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূসের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ইতিবাচক হলেও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় তুলে বিদেশি শক্তিকে আহ্বান জানানো কূটনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।

নেতৃত্ব না অতিকথন?

প্রফেসর ইউনুসের প্রস্তাব দক্ষিণ এশিয়ায় অন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা ও সমন্বিত উন্নয়নের সম্ভাবনার নতুন জানালা খুলেছে। তবে একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য আঞ্চলিক ভারসাম্য ও রাজনীতির সূক্ষ্মতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই—এই প্রস্তাব বাস্তব নীতিগত পদক্ষেপে রূপ নিতে পারবে কি না।

Bangladesh: Muhammad Yunus proposes South Asia economic zone, including Bangladesh, Nepal, India‘s Seven Sisters. India responds to Yunus’ China comments, questioning relevance of regional geography to foreign policy.