হাজারের বেশি মামলা। অভিযোগ, সংখ্যালঘু নির্যাতন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্তর্বর্তী সরকার শুরু করল গ্রেফতারি অভিযান। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তালিকা করা হয়েছে। (Mass arrests begin in Bangladesh over alleged attacks on Hindus)
অভিযোগ, গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। তবে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, আক্রান্তরা বেশিরভাগই বিগত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের সমর্থক। তাই তারা জনতার ক্ষোভের শিকার। কারণ, হাসিনার সমর্থক মুসলিম পরিবারগুলোতেও হামলা হয়েছে। এই ধরণের ঘটনাগুলি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বাইরে। তবে সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা শুরু হয়েছে। হামলার ঘটনা কমে আসছে।
বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবি অনুযায়ী গত ৪ আগস্টের পর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগের তালিকা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে ১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে ৬২টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যশালী সংবাদপত্র ‘ইত্তেফাক’ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ভিত্তিতে ৩৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারেপ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং। বলা হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছিল।
বাংলাদেশ পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক প্রকৃতির এবং ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক। এছাড়া কমপক্ষে ১৬১টি দাবি মিথ্যা বা অসত্য বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবি সব মিলিয়ে ৪ আগস্ট থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে মোট ১১৫টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ভারতে আশ্রিত। অন্তর্বর্তী সরকারের অভিযোগ, শেখ হাসিনা ভারতে থেকে লাগাতার উস্কানি দিয়ে চলেছেন। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রি জানান, শেখ হাসিনার মন্তব্য সমর্খন করেনা ভারত।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগগুলিতে ভারতের শাসন ক্ষমতায় থাকা বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর বিক্ষোভে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে কূটনৈতিক সংঘাত চলছে। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার রাজধানী আগররতলায় থাকা বাংলাদেশের দূতাবাসে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হামলা হয়। এই ঘটনায় তড়িঘড়ি নিন্দা জানায় ভারতের বিদেশমন্ত্রক। হামলার জের ধরে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও হয়। তবে হামলা হয়নি। কূটনৈতিক সংঘাত প্রশমনে ঢাকা সফর করেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রি।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার্র ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষ, কোনো নাগরিক যেন আর নিজেকে বঞ্চিত মনে না করেন। এটাই বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ সবার ও বহুমাত্রিক দেশ। সমস্ত ধর্মের মানুষ, সমস্ত ভাষাগত ও নৃগোষ্ঠী মানুষ যেন একত্রিত হয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারে। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ঢাকার উত্তরায় বৌদ্ধ মহাবিহার চত্ত্বরে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি ঢাকা অঞ্চল আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বৌদ্ধ সর্বজনীন মহাশ্মশানের ভিত্তি স্থাপন’ অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, ‘প্রাচীনকালে বহুবছর ধরে আমাদের জনপদ বৌদ্ধদের শাসনাধীনে ছিল। নেপালের লুম্বিনীতে বাংলাদেশর অর্থায়নে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় একটি বৌদ্ধ বিহার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।’ ধর্ম উপদেষ্টা সকলকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সমুন্নত রেখে পরস্পরের হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান।