উপজাতি কিশোরীর ধর্ষণ! উত্তপ্ত বাংলাদেশে, সংঘর্ষ নিহত ৩, আহত বহু

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খাগড়াছড়ি জেলায় রবিবার জাতিগত সহিংসতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। সপ্তাহখানেক আগে উপজেলার এক অষ্টম শ্রেণীর স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ এই ঘটনা…

Khagrachhari Ethnic Clash

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খাগড়াছড়ি জেলায় রবিবার জাতিগত সহিংসতা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। সপ্তাহখানেক আগে উপজেলার এক অষ্টম শ্রেণীর স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ এই ঘটনা উপজাতি গোষ্ঠী ও বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষের রূপ নেয়। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন আহত অনেক।

Advertisements

সংঘর্ষের সূত্রপাত ও ব্যাপকতা

মঙ্গলবার এক উপজাতীয় স্কুলছাত্রী প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষিত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে চাকমা ও মারমা উপজাতি শনিবার খাগড়াছড়ি শহরে সড়ক অবরোধ করেন এবং আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

   

পুলিশ ও সেনা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ধারা ১৪৪ জারি করলেও হিংসা থেমে থাকেনি। রবিবার তা গুইমারা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। নিহতদের দেহ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তবে তারা উপজাতি না বাঙালি, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

আহত ও ধ্বংসযজ্ঞ Khagrachhari Ethnic Clash

পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে গিয়ে ১৩ সেনা ও ৩ পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুই পক্ষই একে অপরের বাড়িঘর ও দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়, যা জেলা সদর থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক বাঙালি কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ ও জনজীবন

হিংসা ঠেকাতে খাগড়াছড়ি সদর, পৌর এলাকা ও গুইমারা সহ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এর ফলে যেকোনো ধরনের জমায়েত ও মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, শহরটি এখন প্রায় জনশূন্য ও নিস্তব্ধ, কার্যত কার্ফুর মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সতর্ক করে বলা হয়েছে, “কোনো অপরাধীকে রেহাই দেওয়া হবে না।” মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ ও তাৎক্ষণিক তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং নাগরিকদের শান্ত ও ধৈর্যশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপট

খাগড়াছড়ি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘ ইতিহাসে জাতিগত উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ প্রায় নিয়মিত। ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, ভূমি ও রাজনৈতিক অধিকারকে কেন্দ্র করে বাঙালি বসতি স্থাপনকারী ও উপজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই সংঘাত ঘটে।

এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, উপজাতি ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা এখনও কমেনি এবং প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপ ও নজরদারি ছাড়া পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করা কঠিন।