ঢাকা, ২ অক্টোবর ২০২৫: দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে যৌথভাবে এগিয়ে চলা কালাদান বহুমুখী পরিবহন প্রকল্প (Kaladan Multi-Modal Transit Transport Project) বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে একটি নতুন বিকল্প রুট তৈরি করছে। এর ফলে বাংলাদেশের মধ্যবর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন।
২০০৮ সালে শুরু হওয়া কালাদান প্রকল্পের লক্ষ্য হলো কলকাতা থেকে মায়ানমারের সীত্তোয়ে বন্দর হয়ে নদীপথ ও সড়কের মাধ্যমে মিজোরামের রাজধানী আইজলকে সংযুক্ত করা। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে কলকাতা থেকে আইজলের দূরত্ব প্রায় ৭০০ কিলোমিটার কমে যাবে। ভারত ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ কার্যকর হবে। এতে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য বাংলাদেশের ওপর ভৌগোলিক নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে যাবে।
Also Read | বাংলাদেশ এড়িয়ে কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিকল্প রুট প্রায় প্রস্তুত
বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
এ উদ্যোগকে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতদিন ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের প্রাকৃতিক সংযোগ সেতু হিসেবে কাজ করত বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ইউনুসের সাম্প্রতিক চীন সফরে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে “ভূ-সংলগ্ন” বলে উল্লেখ করার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। এর জেরে ভারত বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি সীমিত করেছে। শুধু বেনাপোল সীমান্তেই আটকে আছে ৩৬টি ট্রাক।
অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত ইউনুস সরকার
ইউনুস সরকারের ভেতরে অভ্যন্তরীণ চাপও তীব্র। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটে প্রশাসন দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারকে অপসারণের চেষ্টা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রস্তাব সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়েছে।
ভারতের সুযোগ, বাংলাদেশের সংকট
ভারত ও মায়ানমারের এই যৌথ প্রকল্প ভারতের জন্য কৌশলগত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে শুধু বাণিজ্য নয়, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাবও বাড়বে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের জন্য এটি সুযোগ এবং চাপ—দুটোই বয়ে এনেছে। ইউনুস সরকারকে এখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নবীকরণের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট সামাল দেওয়ার পথ খুঁজতে হবে।
তবে কালাদান প্রকল্পের অগ্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করছে মায়ানমারের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। প্রকল্পের পালেটওয়া–জোরিনপুই সড়ক অংশের কাজ এখনো বিলম্বিত। ফলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নীতি কেমন হবে, এবং ইউনুস সরকার এই চাপ সামলাতে পারবে কি না—তা সময়ই বলে দেবে।