বাংলাদেশের (Bangladesh) সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা জেড আই খান পান্না সম্প্রতি একটি সেমিনারে দেওয়া তার বক্তব্যে দেশের সাম্প্রদায়িকতা ও মানবাধিকার সংকট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।
এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।” এই বক্তব্য তিনি ২ আগস্ট, ২০২৫, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রকাশ করেন। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
জেড আই খান পান্না তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মূলনীতির উপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে। তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বকে উল্লেখ করে বলেন, এই তত্ত্বের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল, বাংলাদেশ তা প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
তবে, তার এই বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ অনেকে মনে করেন, এই ধরনের মন্তব্য সংবেদনশীল ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সেমিনারে জেড আই খান পান্না তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু।
আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা দেখি, জুতো দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।” এই কথা বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেলেন, যা উপস্থিত সকলের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি আরও বলেন, তিনি জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণকারী সকলকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
তার এই আবেগপ্রবণ বক্তব্য সমাজের কিছু অংশের মধ্যে সমর্থন পেলেও, অনেকে এটিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এই ধরনের অসম্মানের ঘটনা কতটা ব্যাপক এবং এটি কি সামগ্রিকভাবে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে? এই মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে, যেখানে কেউ কেউ তার অবস্থানের সমর্থন করেছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থানজেড আই খান পান্না তার বক্তব্যে আরও বলেন, “৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না।” তিনি সংবিধানে হাত না দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং বলেন, “সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।”
এই মন্তব্যটি সরাসরি সরকারের কিছু নীতি ও ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।তার এই বক্তব্যের পর সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের কোন কোন নীতি বা ব্যক্তিকে তিনি ‘বিদেশি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন?
এই ধরনের মন্তব্য কি রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে? অন্যদিকে, তার সমর্থকরা বলছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, যা দেশের মূল সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জেড আই খান পান্নার এই বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি সবসময়ই সংবেদনশীল। মুক্তিযুদ্ধের সময় অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ দেশের জন্মের মূল ভিত্তি ছিল। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ধর্মীয় উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের ঘটনা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে জেড আই খান পান্নার বক্তব্য অনেকের কাছে অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।সমাজে প্রভাবতার বক্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিজ্ঞতা ও আবেগকে সম্মান করছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এই ধরনের বক্তব্য সামাজিক বিভেদ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বিশেষ করে, ‘বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব’ এবং ‘সংবিধানে হাত না দেওয়া’র মতো মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। সরকারের সমর্থকরা এটিকে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হিসেবে দেখছেন, যেখানে বিরোধীরা এটিকে সরকারের নীতির সমালোচনা হিসেবে সমর্থন করছেন।
জেড আই খান পান্নার বক্তব্য বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি তার দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তবে, তার মন্তব্যের কিছু অংশ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি বহুত্ববাদী সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি সবসময়ই সংবেদনশীল, এবং এই ধরনের বক্তব্য সমাজে নতুন করে আলোচনার সূচনা করেছে।
“ভোট চুরি না হলে মোদী প্রধানমন্ত্রীই হতেন না”, বিস্ফোরক দাবি রাহুলের
তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মানের বিষয়টি উত্থাপন করে যে বার্তা দিতে চেয়েছেন, তা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও, এটি কতটা বাস্তবসম্মত বা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভবিষ্যতে এই বিতর্ক কীভাবে গড়ায়, তা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।