Bangladesh: একটা জিন্স প্যান্ট বানাতে লাগে ১০ হাজার লিটার জল! বাংলাদেশ হবে মরুভূমি

আন্তর্জাতিক পোশাক তৈরি শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র বাংলাদেশ। এই দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলিতে সর্বাধিক কর্মসংস্থান হয়। পোশাক তৈরিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়ছে পদ্মা-কর্ণফুলী-ধানসিড়ি…

আন্তর্জাতিক পোশাক তৈরি শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র বাংলাদেশ। এই দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলিতে সর্বাধিক কর্মসংস্থান হয়। পোশাক তৈরিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়ছে পদ্মা-কর্ণফুলী-ধানসিড়ি নদীর দেশটি। জলশূন্য হবে বাংলাদেশ।

ইউরোপের প্রতি তিনটি টি-শার্টের একটি আসে বাংলাদেশ থেকে। ইউরোপে চারটি ডেনিমের মধ্যে একটি এবং আমেরিকাতে প্রতি পাঁচটি ডেনিমের একটির উৎস বাংলাদেশে। রিপোর্ট অনুযায়ী পোশাকশিল্পে চীনের পরে থাকা বাংলাদেশের আধিপত্য আরোও বাড়ছে।পোশাক প্রস্তুত এবং রপ্তানিকারক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা রফতানি করেছে। অল্প দামে পোশাক পেয়ে ইউরোপীয়ানরা যেমন খুশি, বাংলাদেশও খুশি বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি নিয়ে। তবে এই খুশির মাশুল দিতে হচ্ছে পরিবেশকে। একদিকে পাল্লা দিয়ে যেমন বাড়ছে পোশাক উৎপাদন অন্যদিকে তেমনি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর।যেটা সকলের চোখের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

   

পোশাক উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণ জল প্রয়োজন। ওয়েট প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে যেমন- ডাইং, প্রিন্টিং, স্কাওয়ারিং, ডিসাইজিং, ব্লিচিং এবং ফিনিশিং প্রতিটি ক্ষেত্রে জলের দরকার হয়। তবে যে কোনো জল দিয়েই এই প্রক্রিয়া সম্ভব নয়। শুধু বিশুদ্ধ জলের ব্যবহার দ্বারাই ওয়েট প্রসেসিংয়ের সব প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।আর এই কারণেই বাংলাদেশের পোশাকশিল্প সম্পূর্ণই ভূগর্ভস্থ জলের ওপর নির্ভরশীল।

পোশাক কারখানায় এক কেজি কাপড় ওয়াশ করতে ২৫০ লিটার জল ব্যবহার করা হয়, অথচ পুরো বিশ্বে এর জন্য ব্যবহার করে মাত্র ৬০-৭০ লিটার।পোশাক শিল্পে ১টি সুতি টি-শার্ট এবং ১টি ডেনিম জিন্স প্যান্ট তৈরি করতে জল প্রয়োজন হয় ১০ হাজার লিটারেরও বেশি। গবেষণা মতে, প্রতি বছর পোশাক উৎপাদনের জন্য প্রায় ৯৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার জল প্রয়োজন হয়।প্রতি বছর পোশাকশিল্পের সুতো ও পোশাকে ডাইং ও ওয়াশিংয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি লিটার জল, যা ২ কোটি মানুষের ৫-১০ মাসের ব্যবহৃত জলের সমান।আর এই শিল্পে ব্যবহৃত জলের সম্পূর্ণ জোগান আসছে ভূগর্ভস্থ থেকে, যার ফলে বাড়তি চাপ পড়ছে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরে। উদ্বেগজনক হারে কমছে জলের স্তর।

যেসব এলাকায় ওয়াশিং এবং ডায়িং কারখানা রয়েছে যেমন- ঢাকার সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহের ভালুকা, সেই সব এলাকায় ২০১১ থেকে ২০২১ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে দ্বিগুণের বেশি পরিমাণে কমেছে জলের স্তর। গাজীপুরে যেখানে ২৬ মিটার গভীরে জলের লেয়ার পাওয়া যেত, এখন সেখানে ৫১ মিটার গভীরে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে যে অঞ্চলগুলোতে পোশাক কারখানা নেই, যেমন- ঢাকার ধামরাই, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, গাজীপুরের কাপাসিয়া সেখানে ১ মিটারেরও কম হ্রাস পেয়েছে জলের স্তর।গড়ে প্রতি বছর ২.৫ মিটারেরও বেশি কমছে জলের স্তর। এভাবে কমতে থাকলে ২০৫০ সালের দিকে এটা ১১০-১১৫ মিটারে নেমে যাবে। এভাবে হ্রাস পেতে থাকলে অচিরেই দেখা দেবে জলের সংকট।

তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে সরকার মাথা ঘামালেও জলের এই সমস্যা নিয়ে সেদেশের সরকার ভাবছে না। শিল্প কারখানাকে ভূগর্ভস্থ জলের পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ জল ব্যবহারের ওপরও জোর দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মতো ভূ-উপরিস্থ বৃষ্টির জল ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পে জল ব্যবহার কমানোর জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উন্নত প্রযুক্তির ওপর বিনিয়োগ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সমস্যা গোটা প্রক্রিয়ায়। উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে আমদানিকারক ও ক্রেতা সকলের দায়িত্ব নিতে হবে।নাহলে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মতো চড়া দামে জলও কিনে পান করতে হবে।