যশোরে হিন্দু বাড়িতে মৌলবাদীদের হামলা, সর্বস্ব লুট

বাংলাদেশের যশোর, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিকড়ের সঙ্গে জড়িত, আবারও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি দুঃসংবাদ নিয়ে এল। শনিবার ভোরে যশোর জেলার বরভাগ এলাকায় এক হিন্দু…

Islamist Group Posing as Police Robs Hindu Family in Jessore District

বাংলাদেশের যশোর, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিকড়ের সঙ্গে জড়িত, আবারও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি দুঃসংবাদ নিয়ে এল। শনিবার ভোরে যশোর জেলার বরভাগ এলাকায় এক হিন্দু পরিবারের বাড়িতে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ১৫-২০ জনের একটি দল, নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে, পরমেশ্বর প্রধান নামের এক ধনী হিন্দু পরিবারের বাড়ি লক্ষ্য করে এই হামলা চালায়।

ঘটনার বিশদ বিবরণ
হামলাকারীরা প্রথমে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাড়ির দরজা খুলতে বাধ্য করে। ভেতরে ঢুকেই তারা পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে ফেলে এবং বাড়ির সমস্ত মূল্যবান সামগ্রী, নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। এই ডাকাতির ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে এলেও, হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

   

পরিবারের এক সদস্য জানান, “তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। প্রথমে ভাবি সত্যিই পুলিশ এসেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারি, তারা ডাকাত।”

সম্প্রতি লক্ষ্যবস্তু সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধনী হিন্দু পরিবারগুলো ক্রমশই মৌলবাদী শক্তির লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে। হামলাকারীরা অনেক সময় ডাকাত সেজে আসে, আবার কখনও সরাসরি জোরপূর্বক লুটপাট চালায়। যশোরের এই ঘটনা সেই ধারারই সর্বশেষ উদাহরণ।

কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের অন্য প্রান্তেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। ধনী হিন্দু পরিবারগুলো তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে বিশেষভাবে টার্গেট হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যশোর ও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার যশোরের শিকড়ে জড়িয়ে রয়েছে। কলকাতার শ্যামবাজার থেকে শুরু হওয়া যশোর রোড ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই যশোরেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ
যশোরের এই ঘটনাটি বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে। হামলাকারীরা পুলিশের ছদ্মবেশে আসতে পারল কীভাবে এবং এত বড় একটি দল কীভাবে এই পরিকল্পিত হামলা চালাল, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য কাজ চলছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগের অনেক হামলায় দোষীরা ধরা পড়েনি এবং বিচার হয়নি। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বাড়ছে।

মৌলবাদীদের সক্রিয়তা
বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির প্রভাব নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনাগুলো অনেক সময় পরিকল্পিত বলে মনে করা হয়। ধনী হিন্দু পরিবারগুলোকে লক্ষ্য করে তাদের সম্পদ লুট এবং একই সঙ্গে তাদের সামাজিক অবস্থান দুর্বল করার চেষ্টার অভিযোগ উঠছে।

প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া
বরভাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এক প্রতিবেশী বলেন, “আমাদের এলাকায় হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বাস করি। কিন্তু এই ধরনের হামলা আমাদের ঐক্য ও শান্তিকে নষ্ট করছে।”

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ
এই ধরনের ঘটনাগুলির ফলে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা
সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই বিষয়ে মন্তব্য করেননি। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি তুলেছে।

যশোরের এই ঘটনা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই ধরনের হামলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। একই সঙ্গে সমাজের সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে এই বিদ্বেষমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। নাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এই ধরনের হামলা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।