ইউনূসের দেশে নয়া মৌলবাদী সংগঠনের প্রকাশ্যে হিন্দু নিকেশের বার্তা

intifada-bangladesh-radical-islamist-group-hate-speech

ঢাকা: বাংলাদেশে উগ্রপন্থার ছায়া আবারও ঘন হচ্ছে। মহম্মদ ইউনূসের দেশে সম্প্রতি এক নতুন মৌলবাদী সংগঠনের আবির্ভাব ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে দেশজুড়ে, এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। সংগঠনটির নাম ‘ইন্তিফাদা বাংলাদেশ’ (Intifada Bangladesh)। প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে এই সংগঠনের নেতা ও সমর্থকরা এমনসব বক্তব্য দিয়েছেন, যা কেবল ঘৃণাই নয়, উগ্রপন্থাকে নতুন করে উসকে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Advertisements

ঢাকার বুকে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে এক জন মাওলানা নেতাকে প্রকাশ্যে ইহুদি ও অমুসলিমদের “ধ্বংস” করার আহ্বান জানাতে শোনা গেছে। হাতে মাইক্রোফোন, চারপাশে উত্তেজিত জনতা সেই বক্তৃতায় উঠে এসেছে ধর্মীয় বিভাজন, হিংসা ও ঘৃণার সুর। উপস্থিত বহু মানুষ “জিহাদ” ও “ইন্তিফাদা”-র নামে শ্লোগান দিতে শুরু করে। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে একাধিক ছোট-বড় মৌলবাদী সংগঠন মাথা তুলেছে।

   

পারমাণবিক অস্ত্রকে দুর্বল করতে পারে এই বোমা, পরীক্ষা শুরু বেজিংয়ে

কখনও ‘হেফাজতে ইসলাম’, কখনও ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’, আবার কখনও ‘জামায়াতে মুজাহিদিন বাংলাদেশ’-এর মতো সংগঠনগুলির মাধ্যমে এই অঞ্চলে উগ্র ইসলামী রাজনীতির প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে। তবে এবার “ইন্তিফাদা বাংলাদেশ”-এর মতো নতুন নাম সামনে আসায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংগঠনটি হতে পারে এক নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসবাদী প্ল্যাটফর্ম, যারা ডিজিটাল প্রচার ও ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করে তরুণদের মন জয় করতে চাইছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “ইন্তিফাদা বাংলাদেশ কোনো স্বতঃস্ফূর্ত গোষ্ঠী নয়। এদের বক্তব্য, সংগঠন কাঠামো, এবং বেছে নেওয়া সময় সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এর পেছনে বড়সড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। দেশের ভিতরে ও বাইরে থেকে আর্থিক ও আদর্শিক সহায়তাও পাচ্ছে বলে আশঙ্কা।”

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বাস্তবে এমন উগ্র মতবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রশাসন প্রায়ই রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, দেশের সামাজিক ঐক্য ও গণতন্ত্রের জন্য এটি এক গভীর হুঁশিয়ারি।

Advertisements

এদিকে, ভারতের নিরাপত্তা মহলেও এই ঘটনার পর থেকে সতর্কতা বেড়েছে। কারণ, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দীর্ঘ ও সহজগম্য। পূর্বেও দেখা গেছে, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া কিছু মৌলবাদী সংগঠন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করেছে। তাই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এখন “ইন্তিফাদা বাংলাদেশ”-এর কার্যক্রমের দিকে নজর রাখছে।

বাংলাদেশ সরকার এখনও পর্যন্ত এই নতুন সংগঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে গোপনে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই কিছু তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে। জনমতের একটি বড় অংশের দাবি, ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানো এইসব সংগঠনকে দ্রুত নিষিদ্ধ করা হোক এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় যখন অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তখন এমন উগ্রপন্থী সংগঠনগুলিই সুযোগ নেয়। তারা ধর্মীয় পরিচয় ও আবেগকে অস্ত্র করে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়। আর এ কারণেই বাংলাদেশের মতো দেশগুলিতে উগ্রপন্থা প্রতিরোধে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বলে মনে করছেন তাঁরা।

অবশেষে বলা যায়, ‘ইন্তিফাদা বাংলাদেশ’-এর মতো সংগঠন কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই এক নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কতটা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এই হুমকির মোকাবিলা করতে পারে।