খুনের হুমকি উড়িয়ে লালন-রবীন্দ্র-নজরুল গানে বাম সংগঠন উদীচীর ডাকে বাংলাদেশ আলোড়িত

‘মেরে সাইজ করা হবে’ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনের এমন হুমকি বার্তা উপেক্ষা করেই পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বজায় রেখে লালন-রবীন্দ্র-নজরুল গানে বাংলাদেশে (Bangladesh) ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক…

‘মেরে সাইজ করা হবে’ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনের এমন হুমকি বার্তা উপেক্ষা করেই পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বজায় রেখে লালন-রবীন্দ্র-নজরুল গানে বাংলাদেশে (Bangladesh) ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধে (Udichi) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বদলের দাবির বিরুদ্ধে শুক্রবার দেশটির সবকটি জেলা-উপজেলায় জমায়েত ও মানববন্ধন করে রবীন্দ্রনাথ রচিত জাতীয় সঙ্গীতে দিন শুরু করলেন অগনিত বাংলাদেশি।

   

গত ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত। দেশটিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার চলছে। এই সরকারের ঘনিষ্ঠ জামাত ইসলামিসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, রবীন্দ্রনাথ রচিত জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে জাতীয় পতাকা বাতিলের দাবি উঠেছে।

জামাতের এই দাবিতে নীরব অবস্থানে বিএনপি দল। তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সদ্য ক্ষমতা হারিয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন। তবে জামাত ইসলামি ও বিএনপি বলেছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারতের অধীনে চলতে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচার খতম হয়েছে।

রাজনৈতিক পালাবদলের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনগুলি ‘ভারতীয় নাগরিক’ রবীন্দ্রনাথের লেখা গান সোনার বাংলা গান বাতিল করে নতুন জাতীয় সঙ্গীতের দাবি করে। এই দাবির বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের সবথেকে বড় সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। তারা বিবৃতিতে জানায়, “একটি ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যূত্থানের মূল সুরকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধীতা করা থেকে শুরু করে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকার ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছে। এই হীন চক্রান্তের প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের রুখে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

বামপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে উদীচী চিহ্নিত। তাদের এই আহ্বানের বিরোধিতা করে একাধিক ইসলামি সংগঠন ও তাদের ঘনিষ্ঠরা সামাজিক মাধ্যমেই হামলা ও সাইজ করা অর্থাৎ খুনের হুমকি দিতে থাকে। তবে উদীচী তাদের কর্মসূচি বজায় রেখে শুক্রবার সকাল থেকেই বাংলাদেশের সব বিভাগ, জেলা-উপজেলায় ‘সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ’ করে।

শেখ হাসিনা বিরোধী গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠন ও ব্লগার-অ্যাক্টিভিটসদের কটাক্ষ, আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে উদীচী ফের শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় পুন:প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা উদীচী ভারতের নির্দেশে চলা সংগঠন বলে কটাক্ষ করেছেন।

এক নজরে উদীচীর ইতিহাস

উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সংযুক্ত পাকিস্তান আমলে-১৯৬৮ সালে। তৎকালীন পাক সরকার সামরিক শাসন চালাচ্ছিল। এর প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট নেতা সত্যেন সেন উদীচী প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে থেকেই উদীচী সদস্যরা বাঙালি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ বার্তা দিতে থাকেন। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে পাক সামরিক শাসক আয়ুব খানের পতন হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে উদীচী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশ তৈরি হলে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দেশটির প্রধান সাংস্কৃতিক সংগঠনের মর্যাদা পায়।