ঢাকা: বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার গোলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের এক হিন্দু দম্পতি মৌলবাদীদের অত্যাচার ও চাঁদাবাজির জেরে ঘরছাড়া হতে বাধ্য হলেন। দিলীপ দেবনাথ ও তাঁর স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় একদল চরমপন্থী ইসলামপন্থী দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে আসছিল এবং প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছিল। অবশেষে প্রাণভয়ে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন।
দিলীপ দেবনাথ সংবাদমাধ্যমকে জানান, “মেহেদি হাসান মুকুল নামের এক ব্যক্তি ও তার দল প্রায়ই আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করত। তারা বলত, আমাদের থেকে দুই লক্ষ টাকা না পেলে ফল ভয়ানক হবে। ছয় মাস আগে তারা আমাদের মারধরও করেছিল। এবার ফের নতুন করে টাকা দাবি করছে। আমাদের কাছে সেই টাকা নেই।
দীপাবলির পর রুপো বাজারে বড় পতনের ইঙ্গিত
তাই আমরা এখন ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসে পুলিশের কাছে আশ্রয় নিয়েছি।” এই ঘটনার জেরে স্থানীয় এলাকায় তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দিলীপ দেবনাথদের মতো আরও কয়েকটি হিন্দু পরিবার নিয়মিত ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই মুখ খুলতে চাইছেন না, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন প্রতিশোধমূলক হামলার।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, চাঁদাবাজি ও ভয় দেখানোর ঘটনা নতুন নয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, গত কয়েক বছরে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলায় একাধিক হিন্দু পরিবার ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হলেও অপরাধীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায়, ফলে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
দিলীপের স্ত্রী বলেন, “আমরা শুধু নিরাপদে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন এমন অবস্থা যে, আমাদের নিজের জন্মভূমিতেও আমরা অনিরাপদ। বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। পুলিশে অভিযোগ করেছি, এখন দেখি তারা কী করে।” পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ দেবনাথের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গোলাচিপা থানার এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ আমরা পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।” তবে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, প্রভাবশালী অভিযুক্তদের কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া ধীরগতি হতে পারে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষিত থাকলেও বাস্তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এখনও প্রশ্নের মুখে।